প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তবে কেউ গুজব রটাতে পারে। কেউ গুজব রটালে সে যদি ধরা পড়ে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর বাড্ডা হাই স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড্ডা হাই স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুরো কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেন।
এর আগে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে সকাল সাড়ে ৮টার দিকেই কেন্দ্রের বাইরে ভিড় করতে থাকেন এই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে শুরু করেন। সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়।
জানা গেছে, এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে অধীনে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ এবং ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী।
এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট কেন্দ্র ৩ হাজার ৮১০টি এবং মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ৭৯৮টি। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে কেন্দ্র ২ হাজার ২৪৪টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ হাজার ৭৮৬টি।
ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব, চারটি গ্রুপ নজরদারিতে
এবারের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড। তারপরও ফেসবুকের একাধিক গ্রুপে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানোর হয়েছে। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে অগ্রিম প্রশ্ন দেওয়া হবে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।
ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে ফেসবুকে দুটি গ্রুপে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চারটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছেন। এ গ্রুপগুলোর তথ্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যেই এসব গ্রুপ নিষ্ক্রিয় করা হবে।
ফেসবুকে ঝঝঈ ছঁবংঃরড়হ ঙঁঃ অষষ ইড়ধৎফ ২০২৩ এবং ‘ঝঝঈ ছঁবংঃরড়হ প্রশ্ন ফাঁস’ গ্রুপসহ অন্তত চারটি গ্রুপ খুলে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রথম পেজটি খোলা হয় তিন দিন আগে, অন্যটি গত ১৯ এপ্রিল। পেজ দুটিতে বলা হয়েছে, ‘প্রশ্ন নিতে হলে অবশ্যই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী হতে হবে, প্রশ্ন কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না, পরীক্ষার এক দিন আগে প্রশ্ন দেওয়া হবে, তবে বিশেষ প্রয়োজনে পরীক্ষার কিছুদিন আগে নিলে দাম কম-বেশি হবে, সব বোর্ডে।’
‘মূল বোর্ড কপি পাওয়া যাবে, প্রশ্ন পাওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ দিতে হবে। বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ অন্য কারও কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে প্রতারিত হলে এই গ্রপ দায়িত্ব নেবে না।’
আবার বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে , ‘অনেক সময় সাইবার ক্রাইমের সদস্যরা তথ্য নেওয়ার জন্য প্রশ্ন কিনেছে, এতে কর্তৃপক্ষ অনেক সমস্যায় পড়েছে। সে কারণে আগে থেকেই টাকা জমা দিতে হবে।’
অন্যদিকে ফেসবুকের আরেকটি গ্রুপে বলা হয়, ‘যাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালে নয়, তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। অগ্রিম টাকা ছাড়াই ফাঁসকৃত প্রশ্ন ও উত্তর সবার আগে পরীক্ষার আগের রাত ১২টার মধ্যে দেওয়া হবে। কমন পড়লে টাকা দিতে হবে।’
যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নানামুখী সিকিউরিটি কারণে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রশ্নফাঁস করা কঠিন কিন্তু গুজব ছড়ানো সহজ।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা জানান, পরীক্ষা শুরু ২৫ মিনিট আগে জানা যাবে কোন সেটে পরীক্ষা হবে। আর ২৫ মিনিট আগেও প্রশ্ন ফাঁস করার সুযোগ নেই। কারণ প্রশ্ন সরবরাহসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেন্দ্র সচিব ব্যতীত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা পর প্রশ্ন ফাঁস করা অসম্ভব। ফেসবুকে যেসব গ্রুপে প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষা মানেই ছিল প্রশ্ন ফাঁসের মহড়া। নানামুখী তৎপরতায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পেরে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একাধিক প্রশ্ন কেন্দ্র পাঠিয়ে ২৫ মিনিট আগে লটারিতে প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরপর থেকে প্রশ্ন ফাঁস শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এখন প্রশ্ন ফাঁস নেই বললেই চলে।