বন্য হাতির আক্রমণে আমাদের যেন কিছুই করার নেই। হাতির আক্রমণ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে স্থানীয় সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনকে চরম উৎখনটা ও অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়ে সংকটাপন্ন হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শত শত বিঘা ফসলি জমিতে চাষাবাদ বিপন্ন হচ্ছে মানবিক মর্যাদা।
মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষার্থে যেমন দিশেহারা অন্যদিকে চোখে মুখে আতঙ্কের চাপ তাঁদের শান্তনা দিয়ে পাশে থাকার মতো কেউ নেই। অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলতে হচ্ছে হাতি রক্ষার জন্য বন বিভাগ থাকলেও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ রক্ষার কেউ নেই। বন ও পরিবেশ বিভাগের পক্ষে যেটা করা হলো যখনই দেখলেন হাতির তান্ডব গুরুতর তখন উনারা পরিবেশ রক্ষার বিশাল স্লোগান দিয়ে পুরো সীমান্তবর্তী রাস্তা জুড়ে বিশাল পোষ্টারিং করলেন এবং হাতির প্রচুর গুরুত্ব বুঝালেন ও নসিহত করলেন।
স্যাম্যের মুলা বোঝানো বৈষম্যের বয়ান দিয়ে লিখলেন, হাতি মহাবিপন্ন সম্পদ তারা সুবিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ৭১ এর দেশ স্বাধীনের জন্য তাই তাদের দেখলে সালাম বৈ অন্য কিছু করা সম্পূর্ণ হারাম এবং স্বার্থবিরোধী মনগড়া আইন বিরোধী কাজ।
আসুন যদি কেউ হাতি মেরে ফেলে তার শাস্তির ধারাটা কি?
যদি কেউ হাতি মেরে ফেলে তাহলে এইকাজ একজনের পক্ষে থেকে একবার সংগঠিত হলে মাত্র ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা সাথে শ্বশুর বাড়িতে বিনা জামিনে ১০ বছর জেল, তবে একই কাজ যদি কেউ দ্বিতীয় বার সংগঠিত করে তাহলে তার জন্য রয়েছে ধামাকা অফার মাত্র ১৪ লাখ টাকা জরিমানা সাথে বিনা জামিনে ১৪বছরের শ্বশুর বাড়ি ভ্রমনের সুযোগ।
৭১ এর পাকিস্তানের পক্ষে থাকা সিমান্তবর্তী মানুষের ভাগ্যের পরিধি নিয়ে আলোচনা
মহামান্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হলো ১/ যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য রয়েছে ৫০ হাজার টাকার বিশাল ক্ষতি পুরণ যদি কোন ব্যক্তি উক্ত মহামূল্য রত্ম স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি রণবীর পরিবেশের অতন্দ্র পহরী হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন তাহলে উনি পাচ্ছেন মানবতার ফেরিওয়ালাদের সাথে সেলফি তুলার সুযোগ ও এক লাখ টাকার বাম্পার ক্ষতি পুরণ।
অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে যদি তাকায় সীমান্তবর্তী যে সমস্ত এলাকা হাতির সম্ভব্য আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে সেখানে ভারতীয় বর্ডার গার্ড বিএসএফ ও তাদের বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ স্থানীয় জনসাধারণকে সাথে নিয়ে সর্তকতার সাথে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে দেখা যায়। এমনি তারা ফাঁকা স্থানে বুলেট নিক্ষেপ করেও হাতির আক্রমণ প্রতিহত করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে কারো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়নি।
অন্যদিকে আমাদের দেশের জনসাধারণ মশাল শূন্যতায় হাতি পতিহতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার প্রশাসনের কোন সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়াই তাদের একমাত্র ভরসা ছিল আল্লাহ তাআলা। বহু মানুষকে দুহাত তুলে আসমানের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে দেখেছি নির্বাক দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই যেন করার ছিলো না। আমাদের সন্তানহারা মায়ের বাবা হারা সন্তানের আত্নচিৎকারে ভারি হচ্ছে সিমান্তবর্তী আকাশ এভাবে আর কত?
বন ও পরিবেশ বিভাগ তাদের পিতৃতুল্য হাতির গুণকির্তন বর্ণনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করলেন পোষ্টারিং করলেন দিশেহারা রাত-দিন নির্ঘুম আসহায় মানুষের সাথে তামাশা করলেন সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ জীবের জীবনকে খড়কুটোর মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেন আতঙ্কিত মানুষের মনোবল ক্ষুন্ন করলেন অথচ সীমান্তবর্তী মানুষগুলো কিভাবে এর আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারে তার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না। আসহায় খেটে খাওয়া মানুষদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করলেন না। মানুষগুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ধান সেগুলো কিভাবে রক্ষা করা যায় তার কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না। আর ওরা সব বন বিভাগের প্রাণী হয়তোবা নিজেরাও মানুষ নামীয় মাথামোটা হাতির ছোট্ট ছানায় পরিণত ।
শান্তনা দেওয়ার মতো একটা পদক্ষেপও নিতে পারলো না
হাতির আক্রমণ থেকে কিভাবে সহজে বাঁচা যায় বা তাড়ানোর কৌশল সম্পর্কেও তো মানুষকে সচেতন করতে পারতো কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তাদের আয়োজন একেবারেই শূন্য। হাতির জন্যই কেবল তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় তাদের চিন্তা ভাবনা ও কর্মে মানুষ মানুষ মনে হয় প্রাচীণ শিল্পকর্মের ধ্বংসাবশেষে যা হাতির প্রদর্শনের জন্য জাদুঘরে আবধ্য রাখা হয়েছে।
বিঃদ্রঃ এখানে ৭১ ও স্বাধীনতা টেনে আনার কারণ হচ্ছে হাতি কেন্দ্রীক কতৃপক্ষের মায়াকান্নাটা ৭০ এর বৈষম্যের মতোই মনে হয়েছে আমার কাছে আর তাদের বর্তমান আচরণে মনে হচ্ছে আমাদের কোন মূল নেই তাদের কাছে আমরা মনে হয় পাকিস্তান থেকে এসেছি এদেশে।
লেখক : মো: রইস উদ্দিন, বন্য প্রাণী বিষয়ক গবেষক ও কলামিস্ট।