পিবিএ ডেস্ক : পুলওয়ামা কাণ্ডে ওয়াশিংটন ভারতের পাশে দাঁড়ালেও, সেদেশে ভারতীয় পণ্য রফতানির ব্যাপারে কোনও সহানুভূতিই দেখালেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ব্যবসার স্বার্থে ঘা লাগলে, তা সে চীনই হোক কিংবা ভারত, কাউকেই তিনি জমি ছাড়বেন না! ট্রাম্প জানালেন, তার দেশে এত দিন বিনা শুল্কে পণ্য পাঠানোর যে বিশেষ সুবিধা পেত ভারত, এবার তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ওই সুবিধা পেত প্রায় ১ হাজার ৯০০টি ভারতীয় পণ্য। যার মূল্য ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে এবার ওই ভারতীয় পণ্যগুলির উপর শুল্ক চাপানো হবে। তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে একটি চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারত এতদিন জেনারালাইসজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি)-এর আওতায় ছিল। এবার সেই বাণিজ্যিক সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।’
কারণটাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, ভারতে ঢোকা মার্কিন পণ্যগুলির উপর শুল্কের বোঝা কমানো হয়নি। যার ফল ভুগতে হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলোকে। এর আগে মার্কিন মুলুকে যাওয়া চীনা পণ্যগুলির উপর আরও শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন কংগ্রেসকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারত সরকার ও জাতিসংঘের বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর নজর রেখেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুঝতে পেরেছি, ভারত তাদের দেশের বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে এ ধরনের (পড়ুন, মার্কিন পণ্যকে) সুবিধা দেবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারতকে এতদিন যে সুবিধা দেওয়া হত, তার নাম- ‘জেনারালাইজ্ড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস’ (জিএসপি)’। ভারত যত রকমের পণ্য রফতানি করে, তার মধ্যে ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের উপর এত দিন কোনও শুল্ক চাপানো হত না। ফলে, সেই ভারতীয় পণ্যগুলি যুক্তরাষ্ট্রে সুলভ ও সহজলভ্য ছিল। তাদের জনপ্রিয়তা ছিল। ছিল বাজারও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে রফতানি নির্ভর ভারতীয় সংস্থাগুলোর একটি অংশ পড়বে সমস্যায়। মার্কিন জিএসপি প্রোগ্রামে বিশ্বের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায় বলেছেন, ‘এই জিএসপি প্রোগ্রাম থেকে এখনও পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উপকৃত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ভারত। সেই সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া অবশ্যই দিল্লির কাছে একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে, ভারতের কৃষি, সামুদ্রিক সম্পদ নির্ভর পণ্যাদি ও হস্তশিল্পজাত পণ্যগুলির দাম খুব বেড়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের বাজার ধরে রাখতে অসুবিধা হবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে এত বড় পদক্ষেপ এই প্রথম।
যদিও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব অনুপ ভাদবন। তিনি বলেছেন, ‘এর ফলে মার্কিন মুলুকে ভারতীয় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আমাদের মনে হয় না। তবে আমরা (ভারত) কোনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটব না। ভারতে ঢোকা মার্কিন পণ্যাদির উপর বাড়তি শুল্ক চাপানাো হবে না।’ যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে, এমন নয়। তিনি মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠি লিখে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কংগ্রেসে তা পাশ হতে আরও দু’মাস সময় লাগবে। ফলে, ভারত কিছুটা সময় পাবে। মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস অফিসের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে।
পিবিএ/জিজি