সিট দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি আবাসিক হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
শনিবার (১৭ জুন) রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্য সূর্য সেন হলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে চারজন গুরুতর আহত হয়ে ঢাবির ড. মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টা থেকে রুম দখল নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন সূর্যসেন হলের শয়নের অনুসারীরা। ১২টার পরে শয়নের অনুসারীরা ২০৪ নম্বর রুমে আসেন। পরে রুমটিতে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থী মোস্তফা ইকবার হৃদয় ও জাহিদ হাসানের (সৈকতের অনুসারী) জিনিসপত্র রুম থেকে ফেলে দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর সৈকতের অনুসারীরা সেখানে উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ উত্তেজনা চলে।
রাত সোয়া ১টার দিকে দলবদ্ধ হয়ে রুমটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন সৈকতের অনুসারীরা। এসময় শয়নের গ্রুপের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র, লাঠি ও স্ট্যাম্প নিয়ে সৈকতের অনুসারীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইজনকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া দুই জন হলেন- জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের মো. সুজন (শয়ন গ্রুপ) ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জাবের বিন আমিন।
জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় সূর্যসেন হলে শয়নের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মনির হোসেন, তুষার হোসেন ও ওমর ফারুক। অন্যদিকে সৈকতের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আব্দুল্লাহ খান শৈশব ও যুবরাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সমর্থিত গ্রুপের ওমর ফারুক, রাকিব মুন্সি ও মিনহাজ ইমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলের ৩২০,২০৪ ও ৩৩১ কক্ষে অবস্থান করা সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারীদের বের করে দেন।
রাত ১টার পর সৈকত গ্রুপের আরিফুর রহমান যুবরাজ, আব্দুল্লাহ খান শৈশব ও ফয়সালের নেতৃত্বে বিষয়টি মীমাংসা করতে গেলে শয়নের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এসময় তারা সৈকতের অনুসারীদের হল থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেন।
এদিকে সূর্যসেন হলের ঘটনার জেরে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে শয়নের অনুসারীদের ওপর হামলা চালান সৈকতের অনুসারীরা। হামলায় শয়নের অনুসারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হন। এসব ঘটনার জেরে অন্যান্য হলগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, একাত্তর হল, মহসিন হল ও জহুরুল হক হলে গভীর রাতে রুম থেকে বের হয়ে মুখোমুখি হন দুই পক্ষের অনুসারীরা। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক সৈকতসহ বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা সূর্যসেন হলে এসে উপস্থিত হন। দুই নেতার উপস্থিতিতে বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে সবাইকে রুমে ফিরে যেতে বলা হয়।
যদিও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, ছাত্রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আমরা ও হল প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে ফোন করলেও রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন ভুঁইয়া বলেন, একটি রুমে বহিষ্কৃত একজন শিক্ষার্থীকে তোলা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। পরে আমাদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। তারপরও আমরা আজ একটা জরুরি সভা ডেকেছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। ঘটনার বিস্তারিত জেনে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।