জনবল সংকটে গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

gopal-pba

পিবিএ,গোপালগঞ্জ: সাইন বোর্ডে লেখা ৫০-শয্যা গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল ৫০-শয্যার তো নেই-ই উপরন্তু ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উচ্চ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরেরই জনবল সংকট। জনবল সংকটের কারণে খুঁড়ি–য়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ডাক্তার থেকে সুইপার প্রতিটি স্তরই গুরুত্বপুর্ণ। কিন্তু ডাক্তার থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজনৈতিক তদবিরে বদলি করে আনা হলেও কয়েকদিন থাকার পর কেউ কেউ প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে গিয়ে আর আসেন না। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে এসে চরম ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ২০১০ সালের ২৭ জুন মাসে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ৩১-শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ৫০-শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গোপালগঞ্জ-০১ আসনের সংসদ সদস্য লে: কর্নেল (অব:) ফারুক খান। কিন্তু উদ্বোধনের ৯ বছর পার হলেও আসবাপত্র প্রাপ্তি এবং রোগীদের খাদ্যের বিল ভাউচারে ঠিকাদারের প্রাপ্তি ছাড়া আর কোন স্তরেই বাড়েনি জনবল। কিন্তু ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও চাহিদার বেশী রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে।

এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট ৪ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ৪ জনের বিপরীতে আছে মাত্র ২ জন। ১৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ১৭ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলে রয়েছে ৪ জন। প্যাথলজিক্যাল পদে ২ জনের জনবল থাকার কথা থাকলেও অবসরজনিত কারনে এখন ২টি পদই শূন্য। ফলে রোগীদের প্রায় বিনা খরচে রক্ত, পায়খানা, পস্রাব পরীক্ষা করার ল্যাব এবং উপকরণ থাকলে বন্ধ রয়েছে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। অফিস সহকারি ২ জন থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই। ওয়ার্ড বয় ৪ জনের ৪ জনই শুন্য। এলএমএসএস ৬ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৪ জন, বাবুর্চি ২জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১ জন। সুইপার ৬ জন থাকলেও আছে ৩ জন। নাইটগার্ড ২ জন থাকলেও ২ জনই রয়েছেন ডেপুটেশনে। ইসিজি ও আলট্রাসোগ্রাম কেন্দ্র থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। নার্স থাকার কথা ১৪ জন। তবে ১৪ জন থাকলেও দু’জনের বেতন ভাতা এখান থেকে হলেও একজন দায়িত্ব পালন করেন মাদারীপুরের শিবচর উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর অপরজন গোপালগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে এক বিভাগের কর্মী দিয়ে অন্য বিভাগ চালাতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে উপজেলা হাসপাতাল প্রশাসন। প্রতিনিয়ত উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে জনবল সংকটের কথা জানালেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না ভাগ্যে।

তৃণমূলে প্রতি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে রয়েছে জনবল সংকট। স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা ৭০ জন। রয়েছে মাত্র ৫৩ জন। তাদের দেখভাল করার জন্য ১৪ জন সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৩ জন।

তবে আশার তথা হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে আরও ৫০-শয্যার নতুন ভবন। মাত্র ২ বছবের মধ্যে মুকসুদপুর হাসপাতাল হচ্ছে ১’শ শয্যার। জনবলও বাড়ছে আনুপাতিক হারে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন এ হাসপাতালে ৫০-এর অধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু প্রতিটি স্তরে জনবল কম থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে না পেরে ফিরে যেতে হচ্ছে। আর যারাও নিতে পারছেন তারা পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা পান না। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে। ফলে অনেকেই এখন আর এ হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে চান না। রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে জনবল সংকটে হাসপাতালটিই এখন রোগীতে পরিনত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মাহমুদুর রহমান জানান, ৩১-শয্যার হাসপাতালে ৫০-শয্যার রোগীর পথ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করা হলেও স্বল্প সংখ্যক জনবলে এটা বাস্তবায়ন খুবই কষ্টদায়ক। শীর্ষ পর্যায় থেকে সুইপার, নাইটগার্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার চেয়ে বেশী সরকারি বেতনস্কেল ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকতার আদেশ নিষেধ ঠিকমত মানেন না। তারা কোন কোন সপ্তাহে ২ দিন আসেন কোন কোন সপ্তাহে আসেনই না। এজন্য অনেক রোগী তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আশার কথা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্মিত হচ্ছে এক’শ শয্যার একটি নতুন ভবন। এটি হবে আধুনিক এবং ৬ তলা ভবন। প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্মাণ ব্যায় ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া ৫০-শয্যার জন্য নির্মিত বর্তমান ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণে হচ্ছে অনেক কিছু। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার জন্য বাড়ছে আরও জনবল, তদারকিতে যানবাহন পাওয়া গেছে। ৩১-শয্যার জনবল পুর্ণতা পাওয়া যাবে হয়তো শ্রীঘ্রই। #

পিবিএ/বিএস/হক

আরও পড়ুন...