মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : একটি দেশের চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপরীসিম ভুমিকা রাখছে জুয়েলারি শিল্প। দেশে এতদিন জুয়েলারি ব্যবসাকে ছোট ব্যবসা হিসেবে মনে করা হলেও বর্তমানে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্বর্ণ অলঙ্কার মানে জুয়েলারি শিল্পে ভ্যালু অ্যাড অর্থাৎ মূল্য সংযোজন অন্যান্য শিল্পের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে স্বর্ণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে।
জানা গেছে, দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা প্রায় ৪০ মেট্রিক টন। যা পূরণ হয় ব্যাগেজ রুলস বা ব্যক্তি পর্যায়ে স্বর্ণালংকার আমদানি এবং চোরাচালানের মাধ্যমে। আর পুরোনো গহনা থেকে আসে চাহিদার ১০ শতাংশ। হাতে তৈরি স্বর্ণের গহনার প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত হয়। বাংলাদেশের কারিগরদের হাতে তৈরি গহনার আলাদা কদর রয়েছে বিশ্ববাজারে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি গহনার বিপুল চাহিদা রয়েছে। পৃথিবীর সেরা স্বর্ণালঙ্কার শিল্পী ও কারিগররা বাংলাদেশের, যাদের হাতের কাজ বিশ্বসেরা। এ বিরাট সুযোগ এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর তেমন জোরালো উদ্যোগ দেখা যায় না। দেশে যারা স্বর্ণশিল্পী বা কারিগর রয়েছেন তাদের হাতের কাজের সুনাম দুনিয়াজুড়ে। তাদের তৈরি স্বর্ণালঙ্কার বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। তারা শত শত বছর ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন।
বাংলাদেশের অনেক কারিগর দেশে তেমন ভালো কাজের সুযোগ না পেয়ে ভারতে বিভিন্ন স্বর্ণের অলঙ্কার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন। উপযুক্ত পারিশ্রমিক এবং কাজের মাধ্যমে তাদের সুযোগ দেওয়া হলে তারা বিদেশে না গিয়ে দেশেই তাদের দক্ষতা, মেধা ও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারেন। বাংলাদেশি কারিগরদের হাতে তৈরি গহনা রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এর পাশাপাশি স্বর্ণের গহনা বিদেশের রপ্তানিতে সরকারের নীতি সহায়তা থাকা দরকার। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী রয়েছেন। এখানে জুয়েলারি শিল্প গড়ে উঠলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বা জিডিপিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পোশাক শিল্পের যেমন বিশেষ সুনাম রয়েছে, তেমনিভাবে অভিজ্ঞতা, মেধা ও সৃজনশীল ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক উন্নতমানের দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের স্বর্ণের অলঙ্কার প্রস্তুত করে রপ্তানির মাধ্যমে জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ ঘটানো যায়, যা দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি উজ্জ্বল সুনাম বয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, অবৈধ স্বর্ণের অলঙ্কার ও বার দেশের জুয়েলারি শিল্পের বড় বাধা। শুল্ক কমিয়ে লাইসেন্সধারী ডিলারদের জন্য আমদানির সুযোগ আরও সহজ করে দেয়ার দাবি সংগঠনটির।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি কুমিল্লা জেলা সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্প একটি আর্থিক খাত। দেশের অর্থনীতিতে এ শিল্প ব্যাপক অবদান রাখছে। এ শিল্প রক্ষায় সরকারকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে’।