ঢাকার বনানীর অরবিট রিক্রুটিং এজেন্সির গাফিলতির কারণে কুয়েত এয়ারপোর্ট থেকে ১৩ জন নতুন ভিসাধারী বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে কুয়েত সিভিল এভিয়েশন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) অরবিট রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কুয়েতের আল ফয়সাল নামে একটি কোম্পানির ভিসায় কুয়েতে যান ১৩ বাংলাদেশি যুবক। এয়ারপোর্টে আসার পর ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তারা জানতে পারেন, তাদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করার ঘণ্টাখানেক আগেই!
কুয়েতে ইস্যু হওয়া নতুন ভিসার মেয়াদ থাকে তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে ভিসাধারীকে দেশটিতে প্রবেশ করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে প্রবেশ না করলে ভিসা বাতিল হয়ে যায়। আসার পর থেকে কুয়েত বিমানবন্দরের হোটেলে ছিলেন তারা। শনিবার (২৪ জুন) রাতের ফ্লাইটে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে।
২২ জুন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুয়েতের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন এই ১৩ জন। রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের বিএমইটি কার্ড না দেওয়ায় ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পাননি এই যুবকরা। অনেকক্ষণ পরে এজেন্সির লোকেরা বিএমইটি কার্ড নিয়ে আসেন। এদিকে ১৩ যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটটি যথাসময়ে ছাড়তে পারেনি, ফলে কুয়েতে পৌঁছাতে দেরি হয় বিমানের।
ফ্লাইটটি কুয়েতে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত যেতে যেতে রাত ১২টা পেরিয়ে গেলে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, যার কারণে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ ১৩ বাংলাদেশিকে কুয়েতে প্রবেশ করতে দেয়নি।
উন্নত জীবন ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে এসেছিলেন তারা। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবার মতো তাদের এখন ফিরতে হচ্ছে নিজ দেশে।
যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের ভিসার মেয়াদ যেদিন শেষ হবে ঠিক সেদিন রাতের ফ্লাইটে তাদের কুয়েতে পাঠানো হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। তাদের গাফেলতির কারণে কুয়েতে প্রবেশ করতে পারেনি তারা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের বিমানের টিকিট করে দেয় রিক্রুটিং এজেন্সি। এজেন্সিকে আমাদের এই ক্ষতি অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী জানান, নতুন ভিসা বের হওয়ার পর তিন মাস মেয়াদ থাকে। আমরাও যেদিন ভিসার মেয়াদ শেষ সেদিন এসেছি। এর দায় সম্পূর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির। ট্রাভেলসের লোক যদি একদিন আগেও ফ্লাইট দিয়ে দিত তাহলে আর সমস্যা হতো না। শুধু টিকেটের দাম একটু কম পাওয়ার আশায় এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট করছে।
ভুক্তভোগীদের একজন আজিজুল মিয়া বলেন, ১৯ তারিখ আমার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। কিন্তু চারদিন আমি ঢাকায় থাকার পর ২২ তারিখে ফ্লাইট দিয়েছে। এজেন্সি ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমাকে টিকিট দেয়। সেখান থেকে দ্রুত মোটরসাইকেলে বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাকে ইমিগ্রেশন কার্ড দেওয়ার কথা এজেন্সি থেকে, সেটা তারা করেনি। যার কারণে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে আটকে দেয়। পরে এজেন্সি থেকে কার্ড দিয়ে যায়, যার কারণে ফ্লাইট এক ঘণ্টা আমাদের জন্য পিছিয়ে যায়। কুয়েতে বিমান থেকে নামতে নামতে রাত ১২টার বেশি হয়ে যায়। ২২ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে কুয়েত ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের আটক করে রাখে।
বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের মিনিস্টার (শ্রম) আবুল হোসেন জানান, খবরটি জানার পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মালিক নিজে গিয়ে চেষ্টা করলে তাদের হয়ত কুয়েতে প্রবেশ করানো সম্ভব হবে। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা এখন মালিকের ওপরে। আমাদের কাজ হচ্ছে কুয়েতে প্রবেশের পর।