পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলন আমাদের দেশে বহুকাল ধরে। সকালের খাবার হিসেবে পান্তা ভাত খাওয়া হয় অনেক বাড়িতেই। তবে গ্রামের দিকে এর প্রচলন বেশি। শহুরে জীবনে পান্তা ভাতের স্থান নেই বললেই চলে। সকালের খাবারে এর জায়গায় স্থান করে নেয় ব্রেড, জেলি, জ্যাম ইত্যাদি। তবে আপনি যদি পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তখন আর এটি থেকে দূরে থাকতে পারবেন না। ভারতের সেলিব্রিটি পুষ্টিবিদ শ্বেতা শাহ এই স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
পান্তা ভাতের পুষ্টি
শ্বেতা বলেছেন, পান্তা ভাত মাইক্রোফ্লোরা সমৃদ্ধ, যা একটি প্রিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। এটি অন্ত্রের সংক্রমণ রোধ, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ভালো হজমশক্তি, ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং সুন্দর চুলের জন্য কাজ করে। পান্তা ভাত একটি ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে কাজ করে তাই এটি ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং ডিহাইড্রেশন নিরাময় করে। ভাত পান্তা করা হলে এটি বিভিন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পদার্থ, মেটাবোলাইট যেমন ফেনোলিক্স, ফ্ল্যাভন, ভিটামিন ই, ফাইটোস্টেরল, লিনোলিক অ্যাসিড, অ্যান্থোসায়ানিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ হয়। এই শরীর-বান্ধব ব্যাকটেরিয়া কোলেস্টেরল কমাতে, পেরিস্টালসিস উন্নত করতে এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পান্তা ভাত স্বাস্থ্যকর কেন?
ভাত পান্তা করার পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো বিভিন্ন পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। ১২ ঘণ্টা ধরে রাতারাতি ভাত পান্তা করলে এর আয়রনের পরিমাণ নিয়মিত রান্না করা ভাতের তুলনায় ২১ গুণ বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই পান্তা ভাত গরম ভাতের তুলনায় স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।
পান্তা ভাতের উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে তা ভিটামিন বি ১২ এর উপস্থিতির কারণে ক্লান্তি কমাতে কাজ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী খাবার। পান্তা ভাত একটি অন্ত্র-বান্ধব খাবার। এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ তাই স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে পারে।
পান্তা ভাত কীভাবে তৈরি করবেন?
অনেক সময় আগের দিনের রান্না করা ভাত পানিতে ভিজিয়ে পান্তা ভাত তৈরি করা হয়। পরদিন পান্তা ভাতে ভালো করে লবণ মিশিয়ে খাওয়া হয়। তবে শুধু পান্তা ভাত খেতে সুস্বাদু লাগে না। এর সঙ্গে মাছ ভাজা, ডালের বড়া, ডিম ভাজা কিংবা বিভিন্ন ধরনের ভর্তা হলে খেতে বেশ লাগে। অনেকে শুধু পোড়া মরিচ আর পেঁয়াজ ডলেও পান্তা ভাত খেতে পছন্দ করেন।
কীভাবে পান্তা ভাতের পুষ্টি বাড়ানো যায়?
পান্তা ভাত নিজেই একটি পুষ্টিকর খাবার, যা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে যোগ করে খাওয়া হয়। কিন্তু আমরা যদি এতে আরও কিছু পুষ্টিকর খাবার যোগ করি? ভাজা শাক-সবজি, বাদাম, ডাল এবং শেষ অন্তত কিছু প্রোটিন যেমন মুরগির মাংস যোগ করলে তা আরও বেশি পুষ্টিকর হয়ে উঠতে পারে।
পান্তা দিয়ে তৈরি খাবার
এই জনপ্রিয় খাবার বেশিরভাগ সময় শুঁটকি, আচার, পাপড়, ভাজা মাছ ইত্যাদির সঙ্গে খাওয়া হয়। এটি অর্থনৈতিক হিসাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়। পান্তা ভাত দিয়ে ইডলি, দোসা, সাদা ধোকলার মতো সুস্বাদু খাবারও তৈরি করতে পারেন।