নাজমুল হুসাইন,ইবি প্রতিনিধি: মধ্যরাতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য ও তার দুই সহযোগী এই ভাংচুর চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন।
তিনি বলেন, ঘটনার দেড় ঘন্টা আগে বুকের ব্যাথার চিকিৎসা নিতে আসে কাব্য। তাকে প্রাথমিকভাবে প্রথমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তবে এর আধঘন্টা পর আবার এসে এম্বুলেন্স নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চান কাব্য। এসময় এম্বুলেন্স কেন দ্রুত দেওয়া হচ্ছে না এই নিয়ে ভাংচুর চালান এবং এম্বুলেন্স চালকের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন কাব্য।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ অনেকেই এসেছিলেন। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি। তারপর প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।
চিকিৎসা কেন্দ্র সূ্ত্রে জানা যায়, রাত ১০ টার দিকে বুকে ব্যাথার চিকিৎসা নিতে রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন৷ পরে চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ব্যাথার ইনজেকশন দিলে কাব্য চলে যান। কিন্তু এর ঠিক আধঘন্টা পর আবারও কাব্য ও তার সহযোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন এবং কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্স সহায়তা চান। পরে চিকিৎসক ছাত্র সংশ্লিষ্ট ঘটনা দেখে তাকে কুষ্টিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে, এম্বুলেন্স দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করেন রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া পাঠানো হয়।
এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম প্রশাসন ভবনের সামনে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তাদের সাথেও কাব্য অসৌন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। একপর্যায়ে রাত ১২ টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, মেডিকেলে কাব্য জোর করে ডাক্তারের রেফার নিয়েছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসন ভবনের দিকে আমরা তাকে বাঁধা দিলে আমাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে।
চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য। তিনি বলেন, প্রচন্ড বুকের ব্যাথা নিয়ে গেলেও ডাক্তার আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছিলো না৷ তিনি চেম্বারে শুয়ে ছিলেন। পরে ফ্রেশ হয়ে আসতে দেরি করায় আমার পায়ে ধাক্কা লেগে টেবিল-চেয়ার পড়ে যায়।
এদিকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে না গিয়ে মধুপুরে নামার বিষয়ে তিনি বলেন, ওইসময় আমার ব্যাথাটা কিছুটা কমে যায়। তখন একটা ফার্মেসী খোলা দেখি। তারপর সেখান থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে আবার ফেরত চলে আসি।
এদিকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও কুষ্টিয়া যান নি কাব্য বলে নিশ্চিত করেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক শাহীন। তিনি জানান, ‘কাব্য কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করলেও পরবর্তীতে লক্ষীপুর বাজারে থেকে একটি ডিসপেনসারি থেকে কিছু ওষুধ কিনে আবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বি.এম ছাত্রাবাসে ফিরে আসে।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি সকালেই চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। পরে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারও এসে দেখে গেছেন। এরপর ইবি থানার ওসিকে জানানো হলে, তিনি পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করছেন। এছাড়া তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কতৃপক্ষকে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, গতবছর ১৮ জুলাই রাতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় এই কাব্য। ড্রাইভারকে ছুরি দেখিয়ে দশ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ড্রাইভার ও তাঁর সহকারীকে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেন তাঁরা। পরে এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্ণারের সামনে সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেন কাব্য। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। এদিকে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হন কাব্য।