পিবিএ,ডেক্স : রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সময়মতো বিদেশি ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে গুণতে হচ্ছে জরিমানা। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। আর এ অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বাজারে ডলার ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তাতেও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। ৮৪ টাকা ১৫ পয়সার ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকার উপরে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজার চাহিদানুযায়ি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারে ৫ পয়সা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা ১৫ পয়সায়। গত মাসের শেষদিকেও প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ১০ পয়সা। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা মূল্য বেধে দেয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ডলারের দাম বাড়ছে। তবে এক রকম ঘোষণা দিয়ে আরেক দামে ডলার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে। এর আগে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বেশিরভাগ ব্যাংককে সতর্ক ও জরিমানা করেছিল।
ডলারবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১৫৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। আর ডলার বিক্রি করায় কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমানে রিজার্ভ এর পরিমান ৩২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।
এবিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শামস-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২০ মিলিয়ন ডলার চাইলে, তারা যদি ১৫ মিলিয়ন ডলার দেয় বাকিটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মেটানো হয়। ডলার সংকটের এ অবস্থা সাময়িক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতার মাধ্যমে শিগগিরই অবস্থা ভাল হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য সরকারি আমদানির বড় অংশের পেমেন্ট অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমেই দেওয়া হয়।
আর অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আয়ের সঙ্গে আমদানি ব্যয়ের একটা অসামঞ্জস্য হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এর ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী ডলারও দিতে পারছে না ।
গত বছরের ২১ মে থেকে ডলার ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। পরে ২৮ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তব্যাংক ডলারের মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে এখন ৮৪ টাকা ১৫ পয়সা হয়ে গেছে। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে যে দামে ডলার বেচাকেনা করে, তা আন্তঃব্যাংক দাম হিসেবে বিবেচিত। টাকা-ডলার বিনিময় হার গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮২ টাকা ৯৬ পয়সা। সে হিসাবে এক বছরে ডলারের দাম এক টাকা ১৯ পয়সা বেড়েছে। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরের প্রথমে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। সে হিসাবে সে সময়ের তুলনায় পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা বেড়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বাইরে কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজারে) ডলারের দাম দেড় থেকে ২ টাকা বেশি।
অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানিতে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পিবিএ/এমএসএম