পিবিএ,ঢাকা: প্রবাসীদের অত্যন্ত পছন্দের ও বিশ্বে ক্লিন ইমেজের দেশ কুয়েত। জনশক্তি রপ্তানির বাজারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত প্রবাসীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি আব্দুর রশিদ নামে ভয়ঙ্কর এক প্রতারকের কুকর্মের কারণে কুয়েতে বাংলাদেশীদের উজ্বল ভাবমূর্তি ম্লান হতে চলেছে।
জানা যায়, কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ঝলমবাজার সিঙ্গুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রশিদ কুয়েতে আব্দুর রশিদ নামেই পরিচিত। বসবাস করতেন কুয়েত সিটির ফান্টাস এলাকায়। প্রবাসি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি অধিক পরিচিত ভন্ড প্রতারক ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত এক ঘৃনিত ব্যক্তি হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ভিসার দালাল হিসেবে কাজ করতেন সেখানে। পাশাপাশি তিনি নানান অনৈতিক ও অপরাধ কর্মে লিপ্ত ছিলেন কুয়েতে। মাদক ও স্বর্ণচোরা চালান, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা, মাদক সাপ্লাই, ভিসা, আকামা, ভালো চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার নামে সরল মনের প্রবাসীদের বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করা, এহেন কোন অপকর্ম নেই যার সাথে তিনি জড়িত নন।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মানুষকে সম্মোহন করার অসাধারণ কৌশল রয়েছে তার। সে কারণে সহজেই তিনি নিজেকে অত্যন্ত অভিজাত পরিবারের সন্তান ও বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পার্টনারশীপে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে ফেরত না দিয়ে তাদেরকে নানান ভয়-ভীতি ও হুমকি ধামকি ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে চুপ থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন অনবরত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুন মাসে কুয়েত সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে আব্দুর রশিদ ভিসার দালাল হিসেবে আটক হন। এ সময় পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কুয়েতি দিনার পাসপোর্ট জাল ভিসা মাদক ও তার কথিত নেপালি স্ত্রীসহ আটক করে। এরপর টানা ১৫ দিন জেল খেটে অবশেষে কুয়েত সরকার তাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠায়।
দেশে ফিরে তিনি কুমিল্লায় নিজের গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই উধাও হয়ে যান। ভুক্তভোগী কয়েকজন তার সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করে এক পর্যায়ে নিশ্চিত হন তিনি বর্তমানে ঢাকার রামপুরা এলাকায় অবস্থান করছেন। আর এখানে বসেই তিনি তার অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। আর এসব কর্মকান্ড পরিচালনায় তিনি কুয়েতের একটি নাম্বার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি কুয়েতে বাংলাদেশি স্বনামধন্য বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হুমকিধামকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছেন, এবং তার কাছে পাওনা টাকা দাবি করলে তিনি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী ওইসব ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর সংবাদ বানিয়ে তথাকথিত ফেক ইউটিউব টিভি চ্যানেলে মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানহানি হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তিনি তাদের ব্যবসায়ীক ক্ষতিসহ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তিনি কুয়েতে স্বনামধণ্য বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যবসায়িক লোন নিয়ে গা ঢাকা দেন। এরপর অনেক খোজাখুজি করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, তার অসাধারণ বাকপটু্তার কারণে খুব তাড়াতাড়ি তিনি বাঙালি কমিউনিটিতে সর্বমহলে একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।প্রায়স:ই গর্ব করে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার এবং তার একটি ছেলে সিঙ্গাপুরে বিশাল ব্যবসায়ী ও একটি মেয়ে আমেরিকায় ডাক্তারি পড়ছে বলে জানান এছাড়াও তার গ্রামের বাড়িতে বিশাল সহায় সম্পত্তি ও আমেরিকা, সিংগাপুরে দামি বাড়ি গাড়ি ও ব্যবসা থাকার কথা জানান।
প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় কুয়েতে গড়ে ওঠে তার চাকচিক্যময় জীবন। তার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশী ভুয়া পাসপোর্টধারী নেপালের একটি মেয়ে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে জড়িত রয়েছে, যাকে তিনি সবসময় নিজের স্ত্রী পরিচয় দিতেন। তারা দুজনে মিলে গড়ে তোলেন সর্বনাশা এই অপরাধ সাম্রাজ্য ।
সর্বশেষ গত জুন মাসে তিনি ও তার বান্ধবী কুয়েত পুলিশের হাতে আটক হলে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সংবাদটি জানানো হয়। এ ঘটনায় বাঙালি কমিউনিটির সদস্যরা হতভম্ব হয়ে যান তারা বুঝতে পারেন যে তারা আসলে বিশাল প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। কিন্তু জেলে তার সাঁজার মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কুয়েত সরকার তাকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেয়।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাকে খুঁজতে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে এসে সরাসরি তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। সেখানে গিয়ে তারা আরো বিস্মিত হয়ে যান যে, আব্দুর রশিদের গ্রামের বাড়িতে বাপ দাদার আমলের পুরনো ছোট্ট একটি টিনের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। এখানে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। আব্দুর রশিদের পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ৩০ বছরের অধিককাল তিনি একদিনের জন্যও বাড়িতে আসেননি, এমনকি বাড়িতে তিনি একটি টাকাও পাঠাননি। উল্টো বিদেশে বসে কুয়েতে আদম পাচারের নামে এলাকাবাসীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অঙ্কের টাকা।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আরও ভয়ংকর তথ্য উঠে আসে কুয়েত থাকাকালীন সময়ে তার আপন ভগ্নিপতি সেখানে পেট ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হলে চিকিৎসা শেষে কিছুটা অসুস্থতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, দেশে এসেই ডাক্তার দেখাতে গেলে জানতে পারেন তার একটি কিডনি কেটে নেওয়া হয়েছে ফলাফলে তার শরীরে নানান উপসর্গ দেখা দিচ্ছে যেগুলো ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে হতাশ হয়ে যান। এবং প্রকৃত সত্য ঘটনাটি পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সামনে বলে দেন আসলে কি ঘটনা ঘটেছিল তিনি বুঝতেই পারেননি যে তার একটি কিডনি কেটে নেওয়া হয়েছে। এর কিছুদিন পরেই তিনি মারা যান। সেই হিসেবে স্থানীয় বাসীদের কাছে তিনি খুনের দায় অভিযুক্ত একজন অপরাধী। হেনো কোন অপরাধ নেই যার সাথে রশিদ জড়িত নয়।
ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে তাকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ নিজেদের পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাছে। এবং ভবিষ্যতে যেন অত্যন্ত সম্ভাবনামায় এবং নির্ভরযোগ্য শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত কুয়েতে যেন কোন অপশক্তি বা খারাপ ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে প্রবাসী বাঙ্গালীদের ক্ষতি না করতে পারে এবং কুয়েতের শ্রমের বাজার নষ্ট করে রেমিটেন্সের উপর মারাত্মক আঘাত না করে, এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেছেন।