আজানের প্রকৃত ঘোষনা কি?

ajan-pba

পিবিএ ডেস্ক: আজান আল্লাহর একত্ববাদ ও তাওহিদের ঘোষণা। রাসুল (সা.) এর নবুয়তি মিশনের প্রথম কর্মসূচিই হলো আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারী! ওঠো এবং সাবধান করো। তোমার রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো।’ (সূরা মুদ্দাসসির : ১-৩)। আজানের প্রথম বাক্য ‘আল্লাহু আকবার’- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এর মানে হলো, আল্লাহ তায়ালা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ-উপাস্য নেই। সৃষ্টিলোকের রাজত্ব ও সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁর। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি বড়ই মহান ও শ্রেষ্ঠ যাঁর হাতে রয়েছে সৃষ্টিলোকের রাজত্বে।’ (সূরা মুলক : ১)। ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সব ধরনের শিরক, বিদাত এবং তাগুতি শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তায়ালাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মালিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চার-চারবার উচ্চ আওয়াজে আল্লাহু আকবার বলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়- মানুষের মুক্তি-কল্যাণ, ইহলোক ও পরকালের সফলতার জন্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে।

আজানের দ্বিতীয় ঘোষণা, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরিক-অংশীদার নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।’ (সূরা ইখলাস : ১)। লোকমান তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আমার পুত্র! আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় অন্যায়।’ (সূরা লোকমান : ১৩)। এরপর ঘোষণা হয়, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’- অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। মহান আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে জীবন পরিচালনায় অনুকরণীয়-অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়ার ঘোষণা এটি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব : ২১)।

এরপর মুয়াজ্জিন ঘোষণা করেন, ‘হাইয়া আলাস সালাহ।’ অর্থাৎ নামাজের জন্য এসো। তোমার বিবর্ণ জীবনকে বর্ণিল করবে নামাজ। নামাজের মাধ্যমে প্রভুর কাছে হৃদয়ের সুখ-দুঃখ বলবে আর প্রভু তোমকে প্রশান্তিময় জীবন দান করবে। আল্লাহর দরবারে সেজদা করে এক আল্লাহর আনুগত্যের প্রমাণ দিতে সবাইকে পরপর দুইবার আহ্বান জানানো হয় আজানে। মুয়াজ্জিন বলেন, ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’- এসো কল্যাণের জন্য, সফলতার জন্য, শান্তির জন্য। অশান্ত পৃবিবীতে শান্তির খোঁজে হয়রান তুমি। হে মানুষ! এসো! নামাজের দিকে এসো। জীবন-মরণের কল্যাণ এই নামাজে নিহিত। মুক্তি ও কল্যাণের পিপাসায় যারা তৃষ্ণার্ত তাদের এ আহ্বানে সাড়া দিতেই হবে। নামাজের জায়নামাজে দাঁড়াতেই হবে। এছাড়া ভিন্ন পথে শান্তি সমৃদ্ধি, সুখ, প্রেম মিলবে না। আজানের শেষ বাক্যে আবার ‘আল্লাহু আকবার’ দুইবার উচ্চারণ করে মানুষকে সাবধান করার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেয়া হয়- আল্লাহ এক, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। এ ঘোষণা যেন মানুষের হৃদয়মূলে গেঁথে যায়। তাই সব শেষে বলা হয়, ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’- আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই। ইবাদতের একমাত্র মালিক তিনি। সৃষ্টি তাঁর, আইনও চলবে তাঁর।

মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে বান্দার আত্মায় আরেক আজান ধ্বনিত হয়। অন্তরের কান থাকলেই কেবল সে আজানের সাড়া দিয়ে গভীর ঘুম, কনকনে শীত আর ঘরের মায়া ত্যাগ করে জামাতে শামিল হওয়া যায়। যাদের আত্মার কান সজাগ নেই তারাই কেবল আজানের মুগ্ধতা উপলব্ধি করতে পারে না। আজান শুনেও ঘর, পরিবার-পরিজন, ব্যস্ততার ওপর খোদার স্মরণকে স্থান দিতে পারে না। এমন অকৃতজ্ঞদের ঘরই জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাসুল (সা.)। (বোখারি : ১৭৭৯, মুসলিম : ১৫১৫)।

লেখক: অধ্যাপক মাওলানা মুজিবুর রহমান খতিব, জলঢাকা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ জলঢাকা, নীলফামারী

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...