ইসলামের দৃষ্টিতে কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান

pay-pba

পিবিএ ডেস্ক: কিস্তিতে বিক্রয় বলা হয়, যে বিক্রিতে বিক্রেতা বিক্রির সময়ই তার পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়; কিন্তু ক্রেতা সঙ্গে সঙ্গে তার সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করে না, বরং আংশিক মূল্য পরিশোধ করে, আর বাকি মূল্য ধার্যকৃত সময়ে বিভিন্ন কিস্তিতে পরিশোধ করে। তবে কিস্তিতে বিক্রির মধ্যে সাধারণত পণ্যর মূল বাজারদরের চেয়ে বেশি ধার্য করা হয়। ক্রেতা যদি পণ্যটি নগদ মূল্যে ক্রয় করত, তাহলে সে কিস্তিতে যত মূল্যে ক্রয় করছে, তার চেয়ে কম মূল্যে ক্রয় করতে পারত। কিন্তু কিস্তিতে ক্রয় করার কারণে পণ্যটি তাকে বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। কেননা, সাধারণত কিস্তিতে বেচা-কেনায় নগদ মূল্যের চেয়ে তুলনামূলক বেশি মূল্যই ধার্য করা হয়।

সময়ের বিপরীতে মূল্য বৃদ্ধি করা

এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন জাগে তা হচ্ছে, নগদে যে মূল্যে বিক্রি করা হয়, বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি মূল্য ধার্য করা শরিয়তে বৈধ কিনা? চার ইমাম ও অধিকাংশ ফিকাহবিদের মতে, বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে নগদের তুলনায় বেশি মূল্য ধার্য করা বৈধ, তবে কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত রয়েছে। ১. কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়কারী পক্ষদ্বয় বিক্রয়ের চুক্তিতে যে মূল্য ধার্য করবে, পরে ক্রয়কারী যদি নির্দিষ্ট সময়ে তার মূল্য পরিশোধ করতে না পারে, তবুও কিস্তিতে বিক্রেতা সে মূল্যের চেয়ে বেশি দাবি করতে পারবে না। যেমন কিস্তিতে বিক্রেতা কোনো পণ্য ২০ হাজার টাকায় বিক্রয় করল এ শর্তে যে, ক্রেতা সে পণ্যের মূল্য ছয় মাসের মধ্যে কয়েকটি কিস্তিতে পরিশোধ করে দেবে; কিন্তু ক্রেতা ওই পণ্যের মূল্য ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে পারল না, ফলে বিক্রেতা তার চেয়ে বেশি মূল্য দাবি করল, তাহলে তা বৈধ হবে না। ২. ক্রয়-বিক্রয়ের বৈঠকে বিক্রয়ের যে কোনো একটি ধরন নির্ধারণ করে নিতে হবে। যেমন বিক্রেতা বলল, যদি আপনি ছয় মাসের কিস্তিতে এ পণ্যটি ক্রয় করেন তাহলে তার মূল হবে ১৫ হাজার টাকা, আর যদি ৯ মাসের কিস্তিতে ক্রয় করেন তাহলে তার মূল্য হবে ১৬ হাজার টাকা, আর যদি ১২ মাসের কিস্তিতে ক্রয় করেন তাহলে তার মূল্য হবে ১৭ হাজার টাকা।
অতঃপর ক্রেতা কত মাসের কিস্তিতে ক্রয় করল, আর বিক্রেতা কত মাসের কিস্তিতে বিক্রয় করল, তার কোনো একটি ধরন নির্ধারণ না করেই ক্রেতা-বিক্রেতা পৃথক হয়ে গেল, তাহলে এ বিক্রি বৈধ হবে না। মোট কথা, কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে চুক্তির সময় যে মূল্য নির্ধারণ করা হবে, ক্রেতার মূল্য পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার কারণে বিক্রেতা যেমন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাবি করতে পারবে না, তেমনি কত মাসের কিস্তিতে কত মূল্যে পণ্য ক্রয় করা হচ্ছে এ বিষয়টি ক্রয়-বিক্রয়ের মজলিশেই নির্ধারণ করে নিতে হবে, অন্যথায় বিক্রয় বৈধ হবে না। অনুরূপভাবে যদি বিক্রেতা বলে যে, নগদে ক্রয় করলে এত মূল্য, আর বাকিতে ক্রয় করলে এত মূল্য। অতঃপর কোনো একটি মূল্য নির্ধারণ করা ছাড়াই পরস্পর পৃথক হয়ে যায়, তাহলে এ বিক্রিটি বৈধ হবে না। কিন্তু যদি পক্ষদ্বয় চুক্তির বৈঠকেই বেচা-কেনার ধরন ও কোনো একটি মূল্যের ব্যাপারে একমত হয়ে যায়, তাহলে বিক্রিটি বৈধ হয়ে যাবে। তবে রাসুল (সা.) এক বিক্রয়ের মধ্যে আরেক বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিজি : ১২৩১)।

কোনো কোনো ওলামা এ হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন যে, ‘এক বিক্রির মধ্যে দ্বিতীয় বিক্রি’ এর সুরত হচ্ছে যদি বিক্রেতা প্রস্তাব করে বলে যে, এ কাপড়টি আপনি যদি নগদ মূল্যে ক্রয় করেন তাহলে তার মূল্য হবে ১ হাজার টাকা, আর যদি বাকিতে ক্রয় করেন তাহলে তার মূল্য হবে ১ হাজার ১০০ টাকা।

অতঃপর কোনো একটি মূল্য নির্ধারণ করা ছাড়াই যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা পৃথক হয়ে যায়, তাহলে এ বিক্রিটি বৈধ হবে না। এ বিক্রয় চুক্তিটি অবৈধ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা চুক্তির সময় কোনো এক পন্থা নির্ধারণ না করে পৃথক হয়ে যাওয়া। কারণ এর ফলে মূল্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা সৃষ্টি হয়ে গেছে, ‘সময়ের বিনিময়ে মূল্য বৃদ্ধি’ এ ক্ষেত্রে অবৈধ হওয়ার কারণ নয়; কিন্তু যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা কোনো একটি মূল্য নির্ধারণ করার পর পৃথক হয়ে যায়, তাহলে এ বিক্রিটি বৈধ হয়ে যাবে। কেননা, এ ক্ষেত্রে লেন-দেনের ধরনটি অজ্ঞাত নয়। ফলে মূল্যের ব্যাপারেও কোনো অজ্ঞতা সৃষ্টি হয়নি। কোরআন ও হাদিসে কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে, তার অবৈধতার ব্যাপারে প্রকাশ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর কিস্তিতে বিক্রিতে যে মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে, তা সুদের সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। কেননা, এটা ঋণ নয়, বরং এটি হচ্ছে সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়। আর সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিক্রেতার এ ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে, সে তার পণ্য যে কোনো মূল্যে বিক্রয় করতে পারে। অনুরূপভাবে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিক্রেতার জন্য এটা অপরিহার্য নয়, সে সর্বদা তার পণ্য বাজার দরেই বিক্রি করবে। বরং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। একজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় তার পণ্য বিভিন্ন মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যের মূল্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের নির্ধারণ করেন তাহলে শরিয়ত তার প্রতি কোনোরূপ বিধি-নিষেধ আরোপ করে না।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...