পিবিএ ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের অধিবাসীদের চামড়া পাল্টে দেবেন যেন তারা বারবার আগুনের শাস্তি আস্বাদন করতে পারে। আর এ থেকে বোঝা যায়, শাস্তি আস্বাদন ও অনুভব চামড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মানব শরীর বিশ্লেষকরা সম্প্রতি দেখিয়েছেন, ব্যথার অনুভূতি গ্রাহক (স্নায়ু) চামড়ার সঙ্গেই সন্নিবেশিত
আমাদের শরীরের বাইরের আবরণের নাম ত্বক। পুরো শরীরে ত্বকের বিস্তৃতি। ত্বককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অঙ্গ বলে। কারণ ত্বকে রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থি। যেমন তেলগ্রন্থি, ঘামগ্রন্থি ইত্যাদি। স্থান-কাল-পাত্রভেদে একেক ব্যক্তির ত্বক একেক ধরনের বর্ণ ও মসৃণতাবিশিষ্ট হয়। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই একটি শিশুর পুরো দেহে ত্বক তৈরি হয়ে যায়। পুরুষের তুলনায় নারীর ত্বক অপেক্ষাকৃত মসৃণ হয়। কারণ নারীদেহে লিপিড (চর্বি), গ্লিসারলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ত্বকের পুরো অংশেই রয়েছে মৌমাছির চাকের মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্র। এসব ছিদ্র দিয়ে ঘাম, দেহের বর্জ্য, বায়ু দেহের বাইরে বের হয়ে যায়।
ভাবের সম্মোহন, আবেগের তূর্ণগতি আর মাদকতা সৃষ্টির এক সৃষ্টিশীল আধার মানুষের চেহারা বা মুখম-ল। অথচ এর সৌন্দর্যহানি ঘটায় ব্রণ। অনেকের কাছেই এটি বিশাল আতঙ্কের নাম। দীর্ঘদিন ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি এসব ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। এতে সৃষ্টি হয় ব্রণ। মৌমাছির চাকের মতো ছিদ্রগুলো থাকার জন্য ত্বককে দেহের মৌচাকের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে এ ছিদ্রগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।
ত্বকের দুইটি অংশ রয়েছে। এপিডার্মিস ও ডার্মিস। ত্বকের বাইরের পাতলা আবরণটির (যা খালি চোখে দেখা যায়) নাম এপিডার্মিস। এখানে ত্বকের ঘাম, তেলগ্রন্থির ছিদ্রপথ দেখা যায়। এ পথ দিয়ে ঘাম বা তেল বের হয়। লোম বা চুলের ওপরের অংশ এপিডার্মিস দিয়ে বের হয়। ধমনি বা শিরা এখানে থাকে না। আর ডার্মিস হচ্ছে ত্বকের ভেতরের অংশ। এখানে শিরা, ধমনি, স্নায়ু, ঘামগ্রন্থি, তেলগ্রন্থি থাকে। ত্বকের এ অংশ আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। ত্বক ঘাম নিঃসরণ করে দেহের রোগজীবাণু বাইরে বের করে দেয়। দেহের নরম অঙ্গগুলো বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। তেলগ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ করে। এ তেল ত্বকের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে, যা ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়।
পবিত্র কোরআনে ত্বকের বিষয়ে একটি বিস্ময়কর তথ্য এসেছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে আমি তাদের আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।’ (সূরা নিসা : ৫৬)।
এ আয়াত বলে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের অধিবাসীদের চামড়া পাল্টে দেবেন যেন তারা বারবার আগুনের শাস্তি আস্বাদন করতে পারে। আর এ থেকে বোঝা যায়, শাস্তি আস্বাদন ও অনুভব চামড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মানব শরীর বিশ্লেষকরা সম্প্রতি দেখিয়েছেন, ব্যথার অনুভূতি গ্রাহক (স্নায়ু) চামড়ার সঙ্গেই সন্নিবেশিত। ফলে আংশিক চামড়া পুড়ে যাওয়া বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে, যেহেতু গভীর চামড়ার গ্রাহকগুলো (স্নায়ুগুলো) তখনও অক্ষত থাকে। পক্ষান্তরে সম্পূর্ণ চামড়া পুড়ে যাওয়াটা যন্ত্রণাহীন হয়ে থাকে। কেননা তা গ্রাহক স্নায়ুগুলোকেও ধ্বংস করে দেয়। এটি কোরআন মাজিদের একটি সমুজ্জ্বল মুজিজা যে, তা চামড়া সংক্রান্ত এত সূক্ষ্ম শরীর তত্ত্বেরও বর্ণনা দেয়। যখন তা বলে, কোরআনের ভাষায়, ‘তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে।’
থাইল্যান্ড চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ‘তাগাতাত তাজাসেন’ (ঞধমধঃধঃ ঞধলধংবহ) প্রথমদিকে এ কথা বিশ্বাস করতেন না যে, কোরআনে এ বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে। পরে তিনি কোরআনের এ আয়াতটি যাচাই করেন। তিনি কোরআনের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা দেখে এত বেশি প্রভাবিত হন যে, সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত অষ্টম মেডিকেল কনফারেন্সের একটি সাধারণ অধিবেশনে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। (আল কোরআনের ১৬০ মোজেজা ও রহস্য)।
ত্বকের প্রসঙ্গ যখন এসেছে, তিলের বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবে এসে পড়ে। সাধারণত শরীরের কোনো বিশেষ অংশে একটি তিলের অবস্থান সেই অঙ্গের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। এটাও আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের একটি ঝলক। তবে তিলকে শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের জ্যোতি বাড়ানোর কারিগর হিসেবেই ভাবা হয় না। চিন্তাশীল মানুষদের অনেকেই ভাব-লক্ষণ আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিচারে সিদ্ধান্ত চেয়েছেন শরীরের তিলের অবস্থানের ভালো-মন্দ নিয়ে। তবে অনেক চিন্তাশীল মানুষ এটাও মনে করেন যে, এসব ধারণা আসলে কুসংস্কারকেই শক্তিশালী করে এবং এগুলোর সত্যিকারের কোনো ভিত্তি নেই।
পিবিএ/এফএস