পিবিএ ডেস্ক : ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিরাট কোহালির ৪১তম সেঞ্চুরির রাতে জয়ের দেখা পেল না ভারত। ভারতীয় সেনার টুপিতে মাঠে নামার মুহূর্তকে সকলে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের দাপট এবং অ্যাডাম জাম্পার স্পিনের সামনে পথ হারিয়ে ৩২ রানে ম্যাচ হারায় ফৌজি টুপিতে জিতে বের হওয়া হলো না। ১১৩ বলে ১০৪ করে ম্যাচের সেরা উসমান খাজা। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও (৯৯ বলে ৯৩) অবশেষে রানে ফিরলেন। জ়াম্পা দশ ওভারে ৭০ রান দিয়ে নিলেন তিন উইকেট। সন্ধ্যায় শিশির পড়বে ভেবে কোহালি টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই নিজের শহরের আবহাওয়া সম্পর্কে পরামর্শ ছিল ধোনিরও। কিন্তু তাদের বোকা বানিয়ে শিশির অদৃশ্য থেকে গেল শুক্রবার রাতে। তাই পরে বোলিং করেও অস্ট্রেলীয় স্পিনাররা ভেল্কি দেখিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ভারতকে ৩২ রানে হারিয়ে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখল অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া।
কোহালিদের ড্রেসিংরুমের কাছে আরও বড় ধাক্কা হচ্ছে, দেশের মাঠে দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে জয় উপহার দিতে না পারা। রাঁচীর ম্যাচ নিয়ে বলা হচ্ছিল, এটাই ঘরের মাঠে ধোনির শেষ ম্যাচ। সেই কারণে মোহালি এবং দিল্লিতে শেষ দুই ম্যাচে খেলতে চান না। এদিন ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার জানিয়ে দিলেন, শেষ দুই ম্যাচে বিশ্রামেই যাচ্ছেন ধোনি। এই সিরিজে আর খেলছেন না মানে ভারতের হয়ে খেলবেন শুধু বিশ্বকাপে। তারপর দেশের নীল জার্সি তুলে রাখা এক প্রকার নিশ্চিত। তারপরে দেখা যাবে আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সিতে।
রাঁচীর ক্রিকেট ভক্তরাও জানতেন, প্রিয় মাহিকে ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হিসেবে হয়তো এটাই শেষ দেখা। স্টেডিয়াম ভরিয়ে দিয়েছিলেন তারা সাত নম্বর জার্সিতে। সন্ধেবেলায় ফ্লাডলাইটে যখন তিনি ব্যাট করতে নামছেন, ঘড়িতে ছয়টা পনেরো মিনিট। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় টিভি ক্যামেরা ফোকাস করল ঠিক সামনের ভিআইপি গ্যালারিতে। দেখা গেল স্ত্রী সাক্ষী ধোনি উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। গোটা স্টেডিয়ামে মোবাইলের টর্টলাইট জ্বালিয়ে মোহময় করে তুললেন দর্শকেরা। এতকাল তিনি আলো দিয়ে এসেছেন। বিদায়বেলায় মাঠকে আলোকিত করে প্রিয় তারকাকে স্মরণীয় ফেয়ারওয়েল দেওয়া হচ্ছে। স্কোরবোর্ডে তখন ২৭-৩। ভারত তাড়া করছে ৩১৩। শুরুর ব্যর্থতা থামার লক্ষণ নেই। শিখর ধওয়ন ফের কাট মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন। সংগ্রহ ১। রোহিতের ব্যাটে ফের অন্ধকার। ১৪ বলে ১৪। আমবতি রায়ডুকে দেখে মনে হল, তেত্রিশ বছর বয়সে এসে এত চাপ আর নিতে পারছেন না। ৮ বল খেলে তার করা কুৎসিত হার্টের রোগীদের দেখা মোটেও কাম্য নয়।
ধোনি চাপের মধ্যে এসে শুরু করেছিলেন স্বভাবসিদ্ধ ধীরস্থির ভঙ্গিতে। অন্যদিকে কোহালি ক্লাসিকের রামধনুতে ছেয়ে যাচ্ছে মাঠ। দুর্ধর্ষ সব স্ট্রোক খেলছেন। কখনও অসাধারণ কভার ড্রাইভ, কখনও কব্জির মোচড়ে শিল্পীর মতো হুইপ শট, আবার কখনও সাবলীল অন ড্রাইভ। ধোনি একটা ছক্কা মারলেন। মনে হল যেন গ্যালারি বলে উঠল ‘মাহি মার
রহা হ্যায়’।
কে জানত, স্পিনের মাস্টারদের ধরাশায়ী করে দেবেন এক স্পিনার-শিশু সুলভ মুখের অ্যাডাম জ়াম্পা। ধোনিকে ব্যাট-প্যাডে লাগিয়ে বোল্ড করলেন। পুরো স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ করে দিলেন। কেদার যাদবকে এলবিডব্লিউ করলেন। তারপর কোহালির উইকেট নিয়ে খানখান করে দিলেন ভারতের জয়ের আশা। ‘চেজ মাস্টারের’ অবিশ্বাস্য ইনিংসও যথেষ্ট হল না ভারতকে জেতানোর জন্য। ৪১ ওয়ান ডে সেঞ্চুরির ২৫টি এসেছে রান তাড়া করার সময়। এই নিয়ে মাত্র চতুর্থবার সেঞ্চুরি করেও জেতাতে পারলেন না কোহালি। যদিও তার ব্যাটিং নিয়ে মুগ্ধ বিশ্ব। কেভিন পিটারসেন টুইট করলেন, ‘বিরাট কোহালি, তুমি কি রসিকতা করছ? কোথায় টেনে নামিয়ে আনছ আমাদের বলো তো?’ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির টুইটারেও তার বন্দনা। এমনকি, যাদের বিরুদ্ধে কোহালি খেলছিলেন, সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড পর্যন্ত তাদের টুইটারে লিখেছে, ‘কোহালির সেঞ্চুরি নম্বর ৪১। কী অসাধারণ এক ক্রিকেটার!’
পিবিএ/জিজি