যে আমল দ্বারা আল্লাহর প্রিয় হবেন

amonl-pba

পিবিএ ডেস্ক: হাদিস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়…। (সহীহ বুখারী ২/৯৬৩)

এটা হাদীসে কুদসী। হাদীসে কুদসী বলা হয়, যা নবী কারীম (সা.) নিজের শব্দাবলী দিয়ে ব্যক্ত করেন, কিন্তু এর সূত্র আল্লাহ তাআলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করেন।

দুনিয়ার গোলাম মনিবের কাছে এসে বসতে পারে না। দূরে দূরে বসে। মনিবের পাশে ঘেষে বসার সুযোগ পায় না। আর আল্লাহ রাববুল আলামীন বলছেন, আমার বান্দা আমার গোলাম, আমার নিকটবর্তী হয়ে যায়। আমার নিকটে পৌঁছে যায়। যদিও সে আমার গোলাম, তথাপি সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়। কিসের দ্বারা? নফল ইবাদতের দ্বারা। ফরয ইবাদত তো আমরা সবাই করি। কিন্তু নফল ইবাদতের অভ্যাস হয়ত নেই। যদি আমরা নফল পড়ার অভ্যাস করতে পারি, তাহলে আমরা আল্লাহর গোলাম থেকে হয়ে যাবো আল্লাহর মাহবুব ও প্রিয়। কেমন প্রিয় ও মাহবুব হবো? আল্লাহ বলেছেন, বান্দার হাত-পা দেখতে বান্দার হাত-পা হলেও যার নফল ইবাদতের অভ্যাস আছে, আমি সেই বান্দার হাত পা হয়ে যাই। অর্থাৎ তার হাত আমার মর্জির খেলাফ নড়ে না। তার পা আমার মর্জির খেলাফ চলে না।

নফল সম্পর্কে আরো কিছু কথা আরয করছি। যারা মাদরাসায় পড়ি বা পড়াই, এই পড়া বা পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফরয তো পড়িই, এটা তো না পড়লে উপায় নেই, কিন্তু নফলের অভ্যাসটা গড়া হয়নি। এখন থেকে নফল পড়ার অভ্যাসও করা উচিৎ। দিন রাতে কয়েক প্রকার নফল নামায রয়েছে। যেমন-

১. এশরাক-এর নামায

৩৬৫ দিনে এক বছর। প্রতি দিনই যদি একটি হজ্ব এবং একটি উমরার সওয়াব অর্জন হয়, তাহলে এক বছরে কতগুলো হজ্ব ও উমরার সওয়াব হবে ভেবে দেখেছেন? এই বিরাট সওয়াব আমরা এশরাকের নামাযের মাধ্যমে খুব সহজে অর্জন করতে পারি। ফজরের নামাযের কিছুক্ষণ পর সূর্যোদয় হয়। সেই সময় যদি দুই রাকাত নামায পড়ি, তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটি হজ্ব এবং একটি উমরার সওয়াব দান করবেন। (জামে তিরমিযী ১/১৩০)

কয়জনের সৌভাগ্য হয়, টাকা-পয়সা খরচ করে মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা যাওয়ার? বাসা-বাড়িতে, বিশেষত মাদরাসায় অবস্থানরত সকলের জন্য এশরাকের নামায পড়া সহজ। এই সহজ আমলের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩৬৫ হজ্ব এবং ৩৬৫ উমরার সওয়াব পেতে পারি! আল্লাহু আকবার। মাত্র দুই রাকাত নামাযের উসিলায় এত বড় পুরস্কার!

আরেকটি হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা যদি চার রাকাত নামায সকালে পড়ে, সন্ধ্যা পর্যন্ত বান্দার যত কাজ আছে আমি আল্লাহ তার সকল কাজের যিম্মাদার হয়ে যাই। (জামে তিরমিযী ১/১০৮)

প্রতিদিন সকালে কত কাজের ইরাদা করি। কত কিছুর ইচ্ছা করি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কেন হয় না বুঝি না। এশরাকের দুই রাকাতের সঙ্গে আরো দুই রাকাত মিলালে চার রাকাত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল কাজের যিম্মাদার হয়ে যাবেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এশরাকের দুই রাকাতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পুরা করতেন। তালিবুল ইলম ভাইদেরকে বিশেষভাবে বলছি, ৩৬৫ দিন একদিনও যেন এমন না যায়, যেদিন আপনারা এশরাক পড়েন নাই। চেষ্টা করুন। চেষ্টা করলে আল্লাহ পাকের নুসরত হবে।

২. যাওয়ালের নামায

(সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে যায় সে সময়ের নামায)

ক্যালেন্ডারের সময় অনুযায়ী যখন যোহরের সময় হয় যেমন বর্তমানে সোয়া ১২টায় যোহরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। এই সময় হওয়া মাত্রই সকালের অনুরূপ চার রাকাত নামায পড়ে নিবো। এটাকে যাওয়ালের নামায বলা হয়।

৩. চাশতের নামায

যদি সম্ভব হয়, তাহলে সালাতুল ইশরাক ও যাওয়ালের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে ১১ টার ভিতর চাশতের নামায পড়বো। আট রাকাতের কথা রেওয়ায়েতে এসেছে। চার রাকাতের কথাও এসেছে। দুই রাকাত পড়লেও হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সময় কম, সবক আছে, মুতালাআ আছে। সুতরাং একেবারে বাদ দিবো না, দুই রাকাত হলেও পড়ে নিবো।

৪. আউয়াবীন

মাগরিবের নামাযের পর আওয়াবীন পড়বো। সালাতুল আওয়াবীন সম্পর্কে দুই রেওয়ায়েত আছে। ছয় রাকাত ও বিশ রাকাত। বিশ রাকাতের রেওয়ায়েতের সনদে দুর্বলতা তুলনামূলক কম। ছয় রাকাতের সনদ আরেকটু দুর্বল। (কিন্তু মাগরিব ও এশার মাঝে নফল নামায একাধিক সহীহ আছার দ্বারা প্রমাণিত। আর একটি হাসান পর্যায়ের হাদীসে এই নামাযকে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়েছে।) খুব বেশি ব্যস্ততা বা মাদরাসা খোলা থাকা অবস্থায় মাগরিবের পর বিশ রাকাত পড়তে পারবো না। তখন ছয় রাকাতের রেওয়ায়েতের উপর আমল করবো। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) বলতেন, ছয় রাকাত পড়তে না পাড়লে চার রাকাত পড়বে। দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা তো আমরা পড়ছি। তার সঙ্গে চার রাকাত মিলিয়ে নিলে ছয় রাকাত হয়ে যাবে। এই ছয় রাকাতের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বারো বৎসর নফল ইবাদত করার সওয়াব দান করবেন। (জামে তিরমিযী ১/৯৮)

৫. তাহাজ্জুদ

সবচে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাহাজ্জুদের নামায। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, ফরয নামাযের পর শ্রেষ্ঠ নামায হল, রাতের নামায (তাহাজ্জুদ)। (জামে তিরমিযী ১/৯৯)

তাহাজ্জুদের সময় বিক্ষিপ্ত। রেওয়ায়েতে শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশের কথা এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন রেওয়ায়েত আছে। শেষ রাত্রে ওঠা সম্ভব না হলে শোয়ার আগে কয়েক রাকাত পড়ে শুই। হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) বলতেন, এটা তাহাজ্জুদের স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহ পাক তাকেও তাহাজ্জুদগুজার হিসাবে উঠাবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকলকে তাহাজ্জুদগুজার বান্দা হিসাবে কবুল করেন, এজন্য চেষ্টা করতে হবে।

আমি আজ আপনাদের সামনে এই কটি কথাই আরজ করলাম। কথাগুলো বলার খুব ইচ্ছা ছিলো। আল্লাহ পাকের শোকর আপনজনদের মজলিসে তা বলা হয়ে গেলো।

যদি আমরা আগামী দিন সকাল থেকেই এই আমলগুলো শুরু করি এবং করতে থাকি, তাহলে আল্লাহ পাকের মাহবুব হয়ে যাবো। আল্লাহ পাকের গোলাম হয়েও তার মাহবুব হয়ে যাবো। অথচ দুনিয়ার গোলাম তার মনিবের কাছেও ভিড়তে পারে না। এই আমলের মাধ্যমে এই মাদরাসার সকল তালিবুল ইলম ভাই এবং আমরা আল্লাহ তাআলার মাহবুব হয়ে যেতে পারি। আল্লাহ সকলকে আমলগুলো করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

(১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৩৪ হিজরী শান্তিধারা জামিয়া আশরাফিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইসলাহী মাহফিল’-এ হযরত পাহাড়পুরী হুজুরের প্রদত্ত বয়ান। পত্রস্থ করেছেন আল আমীন বিন সাবের আলী)

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...