ফাহিম শাওন, পিবিএ: বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে আমরা অন্ধকার যুগ পেড়িয়ে আলোর গভীরে প্রবেশ করেছি। অনেক বড় পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় এনেছি। যা আগে মানুষের শুধুই কল্পনা ছিল তা এখন বাস্তব এবং সিম্পল ব্যাপার হয়ে গেছে। অপেক্ষার প্রহর গোনার সেই চিঠির যুগ থেকে বেড়িয়ে এসেছি। এখন আমরা চিঠি লেখার সাথে সাথেই পৌছে যাচ্ছে গন্তব্যস্থলে। শুধু চিঠি লেখাই নয়, সরাসরি দেখে কথা বলছি অনেক দূরের আপন মানুষটির সাথে। অনেক দূরের পথ যেখানে পারি দিতে কয়েক মাস কিংবা বছর লেগে যেত সেখানে মাত্র কয়েক ঘন্টায় পৌছে যাচ্ছি।
বর্তমান প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা দূর-দূরান্তের বিভিন্ন খবরাখবর গুলোও জানতে ও দেখতে পাচ্ছি মূহূর্তেও মধ্যে। শুধু তাই নয়, আমরা অন্য দেশের কোন ঘটনা ঘটার সময় সরাসরি দেখতে পাচ্ছি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
মোবাইল ফোনের মত ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, অপরিচিত মানুষদের সাথে প্রীতির বন্ধনও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন।
কিন্তু এর সঠিক ব্যবহারে কি আমরা একবারও ধর্মের কথা ভেবেছি? একবারও কি মনে হয়েছে যে, আমি যা করছি তা কি ইসলাম ধর্ম অনুমতি দিয়েছে। এই কাজগুলো ধর্মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না তো?
ভাবছেন, ফেসবুক-ইউটিউবের সাথে ধর্মের আবার সম্পর্ক কি? এগুলো ব্যবহারে ধর্মের কথা আসবে কেন ?
তাহলে শুনুন ইসলাম ধর্মে কি আছে? হাদিসে বলা আছে, (১) কোন নারী অযু করার পর যদি কোন পর-পুরুষ( বাবা-মা-ভাই/নিকট আত্মীয় ব্যতিত) তাকে দেখে ফেলে তাহলে তার পুনরায় অযু করতে হবে (২) কোন নারীর চুল যদি কোন পর-পুরুষ- (বাবা-মা-ভাই/নিকট আত্মীয় ব্যতিত) দেখে তাহলে কবরের মধ্যে এক একটি চুল এক একটি সাপ হয়ে তাকে দংশন করবে। তাদের দংশন এমন হবে যে, একবার দংশন করলে ৭০ হাত মাটির নিচে চলে যাবে। পুনরায় তাকে তুলে দংশন করতে থাকবে।
তাহলে, এইবার ভাবুন, আমরা ফেসবুকে কি করছি? ফেসবুকে মেয়েরা নিজেদের ছবি(সেলফি) তুলে পোষ্ট করছে। বিভিন্ন মডেলিং করে পোষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, বেপর্দায় অনেক নারীরা ছবি তুলে পোষ্ট করছেন। আর সেখানে পড়ছে হাজার হাজার লাইক। মন্তব্যও করছেন অনেকে। কিন্তু ফেসবুকে হাজার হাজার লাইক পেলেও কি একবার ভেবেছেন, মৃত্যুর পর এই লাইক’ই আপনার জন্য কাল হয়ে দারাবে।
আপনি, যে ধর্মেরই অনুসারী হন না কেন আপনাকে অবশ্যই মৃত্যু বরণ করতে হবে। আজ অথবা কাল। কিন্তু আপনার ধর্মে কি মৃত্যুর পর আপনার পাপ-পূণ্যের হিসাব নেওয়া হবে না? অবশ্যই হবে। তাহলে ভাবুনতো, আপনি কতটা সহজভাবে মনের অগোচরে এই পাপগুলো করছেন। যার কারনে আপনকে সৃষ্টিকর্তার সামনে হিসাব দিতে হবে।
হ্যাঁ, হাদিসে বলা আছে ছবি তোলা যাবে। কিন্তু কখন? যখন আপনার সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় কাজে প্রয়োজন পড়বে ঠিক তখনই ছবি তুলতে পারবেন। তাও শুধু মুখমন্ডল,হাতের কবজি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত এবং পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত। এর বাইরে নয়।
হাদিসে নারীদের পর্দার ব্যাপারে খুবই কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শুধু ধর্মের বিষয়ে নয়,সামাজিক ভাবেও নারী/মেয়েদের ছবি পোষ্ট মারাত্বক হুমকি। যেমন, একটা মেয়ের ছবি দেখে কোন ছেলের পছন্দ হয়ে গেল অথবা কু-বাসনা মনে জাগ্রত হল। যার ফলে সৃষ্টি হল ইভটিজিং নামের অপরাধ। ধর্ষনের মত জঘন্য কাজও সংঘঠিত হচ্ছে নারীদের বেপর্দার কারনে। নারীদের এই বেপর্দা বা অশালীন খুবই সহজতর করে দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়াগুলো। যা তারা মনের অগোচরেই করে ফেলছেন এই ধরনের পাপের কাজগুলো।
আমরা (নারী) কিন্তু সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহারগুলো পজেটিভ ভাবে করতে পারি। যেমন, ফেসবুকের কথাই বলি। আমরা নারীরা ফেসবুক ব্যবহার করলে নিজেদের ছবি পোষ্ট থেকে বিরত থাকতে পারি। আবার বিভিন্ন শিক্ষামূলক পোস্ট দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি। তাহলে আপনার ধর্ম পালন ঠিক থাকল এবং সামজিক অবক্ষয়ও রোধ করতে সক্ষম হবেন।
ভাবছেন, আমি একা সচেতন হলে হবে? ঠিক তাই, আপনি যদি নিজে সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে দেখে আরেকজন সচেতন হবেন। আপনিও আরেকজনকে সচেতন করতে পারবেন। তাহলে প্রযুক্তির খারাপ ব্যবহার থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব এবং সামাজিক মানসিকতাটাও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব।
লেখক: ফাহিম শাওন, সাব-এডিটর,পিবিএ
পিবিএ/হক