বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) ওয়াশিংটন থেকে প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বিষয়টি মূল্যায়ন করতে ৭ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিল মার্কিন প্রতিনিধিদলটি।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ঢাকা সফরকালে অন্তত ২০টি বৈঠক করে।
সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রিসভার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, কূটনীতিকসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদলটি।
সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি বিবৃতি দিল। বিবৃতিতে বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসতে বলেছে প্রতিনিধিদলটি।
প্রতিনিধিদলটি দলটি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানসহ বাস্তবসম্মত, দীর্ঘস্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর খোলামনে আলোচনায় যুক্ত হওয়া উচিত।
প্রতিনিধিদলটি সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলসহ অন্য নির্বাচনী অংশীজনদের বিবেচনার জন্য যে পাঁচ সুপারিশ রেখেছে, সেগুলো হলো—
১. সহনশীল বক্তৃতা ও নির্বাচনী মুখ্য ইস্যুতে খোলামেলা-অর্থবহ সংলাপে বসা।
২. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে ভিন্নমতকে সম্মান করা হয়।
৩. সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
৪. স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনাকে শক্তিশালী করাসহ সব দলের অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করা।
৫. নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী অংশগ্রহণের সংস্কৃতি প্রচার করুন।
৫. নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সক্রিয় নির্বাচনী অংশগ্রহণের সংস্কৃতি উৎসাহিত করা।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বলেছে, এই সুপারিশগুলো একটি পথনকশা তৈরি করবে। সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারে—এমন বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
প্রতিনিধিদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ঐতিহ্য দেশটির একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে। তারপরও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
অগ্রগতির কিছু ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনী অখণ্ডতার সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে আপসহীন রাজনৈতিক মানসিকতা, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা, ভয়ের একটি বিস্তৃত পরিবেশ, নাগরিক সমাজ-মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া, নাগরিক-রাজনৈতিক নেতা-অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি।
প্রতিনিধিদলটি বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারী, যুবক ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীও উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি দেশটির অঙ্গীকারের জন্য একটি ‘লিটমাস পরীক্ষা’।
প্রতিনিধিদলটি বলেছে, উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রযাত্রাকে বিঘ্নিত করতে পারে।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশসহ নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।