নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার নির্বাচন

পিবিএ ডেস্ক : নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘মিনি পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রচার পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও শেষ মুহূর্তে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে (স্টিলের বক্স) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো, ভোটকক্ষে প্রার্থীদের এজেন্ট না রাখাসহ বেশ কিছু অভিযোগের কারণে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য প্রায় সব প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল ও স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ২১ জন শিক্ষার্থী। সাধারন সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন।

রেজওয়ানুল হক
ভিপি প্রার্থী, ছাত্রলীগ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনোনীত হন। ২০০৮–০৯ শিক্ষাবর্ষে তিনি আইন বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রভাতফেরী ও স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বাঁধনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

গোলাম রাব্বানী
জিএস প্রার্থী, ছাত্রলীগ
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানীর বাড়ি মাদারীপুরে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে সংগঠনের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের ইতিহাস নিয়ে একাধিক গ্রন্থও তিনি রচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখেন তিনি। পথশিশু ও অসহায় মানুষকে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে দেওয়ার কাজে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে দেখা গেছে তাঁকে।

মোস্তাফিজুর রহমান
ভিপি প্রার্থী, ছাত্রদল
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায়। স্থানীয় স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। তবে ৯ বছর ধরে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি ছাত্রদল। সংগঠনের নেতারাও ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি।

আনিসুর রহমান খন্দকার
জিএস প্রার্থী, ছাত্রদল
সংগীতে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে আনিসুর রহমান খন্দকারের। নিজেও ভালো গাইতে পারেন। একতারা বাজিয়ে বন্ধুমহলে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জন্ম নেওয়া আনিসুর থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এখন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। ভোটের প্রচারণার শুরু থেকেই বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি।

লিটন নন্দী
ভিপি প্রার্থী, প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য
বাগেরহাটের ফকিরহাটে জন্ম লিটন নন্দীর। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এই শিক্ষার্থী ২০০৯ সালে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৫ সালে বর্ষবরণের আয়োজনে টিএসসি এলাকায় নারী নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদ করে আলোচিত হন তিনি। এই ছাত্রনেতা আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণও করেছেন।

ফয়সাল মাহমুদ
জিএস প্রার্থী, প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য
শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদের জন্ম কুষ্টিয়ায়। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার পরই জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী ছাত্ররাজনীতিতে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (বদরুদ্দীন উমর) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পান ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ক্যাম্পাসে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর।

নুরুল হক
ভিপি প্রার্থী, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ডাকসুর ভিপি পদে লড়ছেন নুরুল হক। পটুয়াখালীতে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষার্থী ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন তিনি। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল বিতর্ক, অভিনয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।রাশেদ খান
জিএস প্রার্থী, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ
ঝিনাইদহ জেলায় জন্ম নেওয়া রাশেদ ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এই বিভাগে তিনি ভর্তি হন। এখন একই বিভাগে এমবিএ পড়ছেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি মারধরেরও শিকার হন।
পিবিএ/শআ

আরও পড়ুন...