সব বিদেশি কোচকে জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করার নির্দেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচিং প্যানেলে বিদেশি কোচে ঠাসা। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, প্রধান সহকারি নিক পোথাস, পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ, ফিল্ডিং কোচ শন ম্যাকডরমট, ট্রেনার নিক লি, টেকনিক্যাল কানসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম ও কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসনসহ ৮ বিদেশি কোচের পিছনে মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিসিবি।

বেতন-ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ এক এক হাথুরুসিংহের পিছনেই মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থ খরচ হয়। সব মিলিয়ে ৮ বিদেশি কোচের বেতন মাসে কয়েক কোটি টাকা।

এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে রাখা এই বিদেশি কোচদের অর্জন ও প্রাপ্তি কী? তারা জাতীয় দলকে কী দিতে পেরেছেন এখনও পর্যন্ত? তাদের কোচিংয়ে টিম বাংলাদেশের কতটা উন্নতি হয়েছে?

এই আটজন বিদেশি কোচের কোচিংয়ে বাংলাদেশ দল আসলে কতটা উপকৃত হয়েছে? এসব প্রশ্ন বাংলাদেশের বেশিরভাগ সমর্থক ও অনুরাগীর মনেই উঁকি দিচ্ছে। অনেকেই মনে করেন বিদেশি কোচিং স্টাফের কোচিংয়ে সে অর্থে তেমন চোখে পড়ার মত উন্নতি ঘটেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।

বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স চরম খারাপ হওয়ায় সে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। তাই তাদের পিছনে এত বিপুল অর্থ খরচ না করার প্রস্তাবও উঠেছে সব মহল থেকেই। আর তাই বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের বড় অংশ ভিনদেশী কোচিং স্টাফের বিশাল বহর ছোট করার দাবিতেও সোচ্চার।

সত্যিই কোচিং স্টাফে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে? বিসিবি কি ভাবছে এ নিয়ে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবি এখনই কাউকে সরাসরি না করবে না।

বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, বিশ্বকাপ শেষে কোচিং স্টাফের ৮ সদস্যর একজনকেও তাৎক্ষণিকভাবে চাকুরিচ্যুত করা হবে না।

কারন, এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্য। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশে ও তাদের মাটিতে টানা খেলা টাইগারদের। বিশ্বকাপ ফাইনাল (১৯ নভেম্বর) শেষ হওয়ার ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট বাংলাদেশের।

এখনো ভেন্যু চুড়ান্ত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে ২৮ নভেম্বর সিলেটে প্রথম টেস্ট শুরু। আর ৬ ডিসেম্বর থেকে শেরে বাংলায় শুরু দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এর পরপরই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সমান ৩ ম্যাচের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

যেহেতু বিশ্বকাপের পরপরই টানা খেলা, তাই এখনই কারো ব্যাপারে কোনোরকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে সব কোচিং স্টাফকে ওই ২ সিরিজে কাজ করার জন্য বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, হাথুরুসিংহে আর নিক পোথাস ছাড়া বাকি ৬ কোচিং স্টাফের (অ্যালান ডোনাল্ড, রঙ্গনা হেরাথ, শন ম্যাকডারমট, নিক লি, শ্রীধরন শ্রীরাম ও শ্রীনিবাসন) চুক্তির মেয়াদ এই নভেম্বরের ৩০ তারিখেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এর সঙ্গে বিশ্বকাপের পারফরমেন্সের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ ব্যাপারটা এভাবে দেখার কোনই উপায় নেই যে, অমুক কোচের বিশ্বকাপ পারফরমেন্স খারাপ হয়েছে বলেই চলতি নভেম্বরেই তাকে বিদায় করে দেওয়া হবে।

মূলত বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ কোচ নিয়োগ দেয় কোন না কোন বিশ্বকাপ সামনে রেখে। এখন যারা কোচিং স্টাফে আছেন, তাদের ৬ জনের সঙ্গেও এবারের বিশ্বকাপকে মানদণ্ড ধরে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তি করা হয়েছে। হাথুরুসিংহে আর নিক পোথাসের সঙ্গে চুক্তি আছে আরও দেড় বছর ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।

এখন দেখার বিষয় বিসিবি শেষ পর্যন্ত কার কার চুক্তি নবায়ন করবে! অবশ্য শুধু বিসিবি চুক্তি নবায়ন করতে চাইলেই যে ওই ৬ জনের সবাই তা মেনে আগামীতেও টিম বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবেন, তাও না।

৩০ নভেম্বরের পর হাথুরু আর পোথাস ছাড়া বাকিদের চুক্তি নবায়নটা নির্ভর করছে দু’পক্ষের সন্মতির ওপর। কোন এক পক্ষ না চাইলে আর হবে না। ২ পক্ষ উৎসাহী হলেই শুধু চুক্তি নবায়ন করা হবে।

এদিকে যেহেতু বিশ্বকাপ শেষেই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হোম সিরিজ ও নিউজিল্যান্ড সফর, তাই সব কোচিং স্টাফকে ৩০ নভেম্বরের পর নিউজিল্যান্ড সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, সবাইকে এ মর্মে মেইল করে জানিয়েও দেয়া হয়েছে। এখন কে কে তা গ্রহণ করেন সেটাই দেখার। কেউ তা না চাইলে ধরে নিতে হবে, তিনি আর থাকবেন না।

আরও পড়ুন...