শাহজাহান ওমরের আ’লীগে যোগদান, সাথে নেই কোনো শিষ্য

পিবিএ,ঝালকাঠি প্রতিনিধি: দুপুরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঘন্টা খানেকের মধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তম নৌকা প্রতীক পেয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তার সাথে নেই স্থানীয় কোনো বিএনপি নেতা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের মধ্যে ওমরের যোগদান নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় রাজাপুর বাঘরি এলাকায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে শাহজাহান ওমরকে প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন দীর্ঘ দিনের ওস্তাদের (এলাকায় শাহজাহান ওমরকে সবাই ওস্তাদ বলে ডাকে) শিষ্য উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিম আকন। তিনি বলেন” আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি, তিনি আমাদের কথা শোনেননি। আমরা তার সাথে নেই, যতদিন বেচে থাকবো বিএনপির সাথে থাকবো। তিনি অনেক বড় মানুষ, এখন আমরা ছোট মানুষরা মিলেমিশে বিএনপি করবো। নাসিম আকন বলেন, শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণার সাথে সাথে রাজাপুরে তার বাসভবনের কেয়ারটেকার সিদ্দিক বাইপাস মোড়ে বিএনপি অফিস থেকে সাইন বোর্ড খুলে ফেলেছে এবং আসবাবপত্র ফেলে দিয়েছে। আমি একদিন সময় চেয়েছিলাম আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু কোনো সময় দেয়া হয়নি। শুনছি এখন এই অফিসে নৌকা প্রতীকের কাযর্ক্রম চালানো হবে। উল্লেখ্য ২০০৩ সালে জোট সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে শাহজাহান ওমর নিজের কিছু জমি ও সড়কের পাশে রোডস এন্ড হাইওয়ের কিছু জমির ওপর বিশাল আকৃতির দোতলা ভবন তৈরি করে বিএনপি অফিস নির্মান করেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনী সরকারি জমির ওপর তৈরি করা অংশ ভেঙ্গে ফেলতে চাইলেও কোনো শ্রমিক ওমর সাহেবের ভবন ভাঙার কাজে রাজি হয়নি। রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট খাইরুল আলম সরফরাজ বলেন, আমাদের আসনে আগে যাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল সেই বি এইচ হারুনের সাথে আমরা ছিলাম না, আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছি মনিরুজ্জামান মনিরকে, আমরা এখন পর্যন্ত তার নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় আছি। তারপরও যদি আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দের পর কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে আমরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। কিন্তু আমরা হারুনের নির্বাচন করবো না। তবে শাহজাহান ওমর আমাদের সাথে একটু কথা বলে যোগ দিলে ভালো হতো। তিনিও আমাদের কিছু বলেন নি, দলও আমাদের কিছু জানায়নি।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গত রোববার সারা দেশে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তখন রাজাপুর-কাঁঠালিয়া নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে হঠাৎ বিএনপি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পাচ বারের সাবেক এমপি ওমরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ‘ বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি আমরা টেলিভিশনের খবরে ওনার যোগদানের খবর শুনেছি ।

শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির যুগান্তরকে বলেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মীরা মেনে নেবেন না। তিনি রাজাপুরে বিএনপি অফিসকে আওয়ামী লীগ অফিস বানানোর চেস্টা করছেন। গত

২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এই বীর উত্তম নেতাকে।

প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর গত বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ঝালকাঠি–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আরও পড়ুন...