পিবিএ,কামরুজ্জামান নাবিল: সারা বিশ্বজুড়ে কিডনির পাথর রোগের পরিমান বেড়েই চলেছে। যে রোগে বিশ্বের প্রায় ১২ ভাগ মানুষ প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে এটি রেনাল ফেইলরের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় সেক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরী। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি ১১জনে ১জন আমেরিকান এবং প্রতি বছর প্রায় ৬লাখ আমেরিকান কিডনি পাথর রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
সব বয়সের নারী-পুরুষের মাঝেই এই রোগ দেখা দিতে পারে তবে ২০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যবর্তী বয়সের মহিলাদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
কিডনি পাথর প্রতিরোধের কোন নির্দিষ্ট উপায় এখন পর্যন্ত জানা না গেলেও নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ইত্যাদিতে পরিবর্তন আনতে পারলে এই রোগ থেকে মুক্তি অনেকাংশে সম্ভব হতে পারে।
কিডনি প্রতিরোধে আমরা যা করতে পারি এ বিষয়ে চলুন কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক,
পরিমিত পানি পানঃ বেশি পানি পান করা কিডনি পাথর প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হতে পারে। প্রত্যেকের প্রতিদিন গড়ে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। কেননা খাদ্যের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস বা ইউরিক এসিডের মতো নানা খনিজ উপাদান যেগুলো পাথর তৈরিতে ভুমিকা রাখে সেগুলো পানিতে দ্রবীভূত না হলে মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে তা কিডনিতে জমে গিয়ে পাথর সৃষ্টিতে সহায়তা করে। পানির ঘাটতি পূরণ করতে লেবু এবং কমলার জুস ভাল বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। লেবু এবং কমলায় সাইট্রিক এসিড রয়েছে যা পাথর গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
আপনি পরিমানমত পানি পান করছেন কিনা তা প্রসাবের রং দেখে নিজেই খুব সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। প্রসাবের রং যদি পরিষ্কার বা ফ্যাকাশে হলুদ না হয়ে কাল হয় তবে তারচেয়ে বেশী পানি করা জরুরী।
খাবারে লবণের পরিমান কমানোঃ খাবারে অধিক পরিমানে লবণ ক্যালসিয়াম যুক্ত কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। লবণ প্রস্রাবে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করে। এতে খনিজ জমতে শুরু করে এবং ক্যালসিয়াম পাথর তৈরিতে ভুমিকা রাখে। অন্যদিকে অধিক সোডিয়াম সিস্টিন নামের এমিনো এসিড বাড়াতে ভুমিকা রাখে যা সিস্টিন যুক্ত পাথর সৃষ্টি করে।
যে খাবারগুলোতে অধিক লবণ থাকে যেমন, চিপস , ক্র্যাকার হিসেবে প্রক্রিয়াজাত খাবার, ক্যানজাত স্যুপ, ক্যানজাত সবজি, সোডিয়াম বাইকার্বনেট (বেকিং সোডা) সমৃদ্ধ খাবার ইত্যাদি। প্রত্যেকের প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম লবণ খাওয়া প্রয়োজন।
পরিমিত ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম অধিক পরিমান যেমন কিডনির পাথর তৈরিতে ভুমিকা রাখে অন্যদিকে ক্যালসিয়ামের পরিমান শরীরে ঘাটতি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কেননা ক্যালসিয়াম শরীরের অনেক পদার্থ শোষিত হবার পূর্বে শরীর থেকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে থাকে।
অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়াঃ এক প্রকার পাথর আছে যা অক্সালেট ও ক্যালসিয়াম একসাথে যুক্ত হয়ে এক প্রকার যৌগ তৈরি করে ও পাথর তৈরিতে ভুমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরী। যে খাবারগুলোতে অক্সালেট রয়েছে যেমন, চা, কফি, বিট, লাউজাতীয় তরকারি, মিষ্টি আলু, পালংশাক, টমেটো স্যুপ, ক্যানজাত ফলের সালাদ, রুবার্ব বা রেউচিনি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
২০১৪ সালে ৫০ হাজার কিডনিতে পাথর থাকা এমন রোগীদের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেসব রোগীর মাঝে ৬৭ ভাগ রোগীর পাথর ক্যালসিয়াম অক্সালেটে গঠিত।
সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশী খাওয়াঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ভাগ কিডনি পাথরের রোগীদের শরীরে সাইট্রিক এসিডের পরিমান কম অর্থাৎ হাইপোসিটরেউরিয়া রয়েছে। সাইট্রিক এসিডের পরিমান বাড়াতে লেবু, কমলা, আম, আপেল, তরমুজের জুস খাওয়া যেতে পারে।
সাপ্লিমেন্ট ও ভিটামিনের ভুমিকাঃ প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট ও ভিটামিন কিডনি পাথর রোধে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারে যেমন, পটাসিয়াম সিট্রেট, ভিটামিন বি-সিক্স যা কলা, আম, এভোকাদোসে পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছের তেল ভুমিকা রাখতে পারে।
অধিক প্রোটিনযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ মাংস, মাছ এর মতো উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমানো যেতে পারে। মাংস এবং অন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে পিউরিন থাকে। শরীরে পিউরিনের মাত্রা বেশি হলে ইউরিক এসিডের উৎপাদন বেশি হয়, যা পাথর সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এতে পাথর তৈরির মতো অবস্থা তৈরি হতে বাধার সৃষ্টি করে। ব্যায়াম ওজনও নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে এবং কিডনির পাথরের সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।
পিঠে, পেটে কিংবা দুই পায়ের সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা অনুভব করা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব করা, প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা এবং বমি বমি ভাব কিংবা বমি করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেকক্ষেত্রে পাথরের সাইজের আকার ক্ষুদ্র হলে অস্ত্রপাচার ছাড়ায় তা চিকিৎসা করা সম্ভব।
পিবিএ/এমএসএম