ফরিদপুরের কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে

পিবিএ,ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সামাদ কাজী (৪৫) স্বাবলম্বী হয়েছেন কলার চাষ করে। সে ওই গ্রামের মান্নান কাজীর ছেলে। আট বছর আগে বাড়ির পাশে এক একর ৩২ শতাংশ জায়গা ইজারা নিয়ে কলার বাগান তৈরি করেন। এরপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিগত আট বছরের পথ পরিক্রমায় সামাদ কাজী বর্তমানে সদরের নর্থ চ্যানেল, ডিক্রির চর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় সব মিলিয়ে চারশ বিঘা জমিতে কলার বাগান করেছেন। বর্তমানে তিনি চারজনকে অংশীদার হিসেবে নিয়ে এ কাজ করছেন।

সামাদ কাজী বলেন, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। পৈত্রিক কোন জমিনও ছিলোনা। অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালিয়েছি। আট বছর আগের বাড়ির পাশে চার বিষা জমি পাঁচ বছরের জন্য ৪০ হাজার টাকায় ইজারায় নিয়ে কলা চাষ শুরু করি। ওই জমিতে দেশী জাতের এক হাজার ২০০টি সবরি কলার চারা রোপন করে ভালো ফলন পাই। এক বছরে খরচ বাদে দুই লাখ টাকা লাভ হয়। এতে উৎসাহ পেয়ে সে বছর থেকেই কলাচাষে মনযোগ দেই।

সামাদ জানান, এ বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার কলা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে যদি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হয়। তিনি জানান তাদের উৎপাদিত কলা তেজগাঁও, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বিক্রি হয়। অনেক সময় ব্যাপারিরা এসে বাগান থেকেই কলা কিনে নিয়ে যান। তিনি আরো জানান, গাছে কোন ধরনের রাসায়নিক সার না দেয়ায় কলা সুস্বাদের হয়।

তিনি জানান, তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। নিজে পড়াশুনা না করলেও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করিয়েছেন। বড় মেয়ে সুমি আক্তার এইচ এস সি পাশ করার পর বিয়ে দিয়েছেন। মেঝে মেয়ে উর্মি আক্তার এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে শাহানা আক্তার তৃতীয় ও একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ কাজী দ্বিতীয় শেণির শিক্ষার্থী।

সামাদের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, কলা বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ৩৭ শতাংশ জমি কিনে তার উপর একটি সেমি পাকা ঘর তুলেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতেই কম বেশি কলার চাষ হয়। তবে সদর ও সদরপুর উপজেলা কলা চাষ বেশি হয়। জেলায় কলার আবাদ দিনে দিনে বাড়ছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কলার আবাদ করা হয়েছে ৮৬০ হেক্টর জমিতে। এর আগের অর্থ বছর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে কলার আবাদ হয়েছিল ৮১০ হেক্টর জমিতে। গত অর্থ বছরে ফরিদপুরে কলা উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্ত্তী বলেন, সামাদ কাজী একজন সফল কলা চাষী। এলাকায় কলা চাষের ব্যাপারে তাঁর অনেক সুনাম রয়েছে। সামাদের দেখাদেখি আশেপাশের অনেকেরই কলা চাষে আগ্রহ জন্মেছে। এছাড়া ফরিদপুরে অনেক চর রয়েছে। এসব চর এলাকায় কলা, ভুট্রা ছাড়া অন্য ফসলের ফলন ভালো হয়না। তিনি আরো জানান, কলা চাষাবাদে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তন থেকে সব ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

পিবিএ/এমএনই/এমএসএম

আরও পড়ুন...