পিবিএ,ঢাকা: আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব সিনেমা হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। সরকার সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বুধবার ‘সিনেমা হল বাঁচলেই চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সরকারের সুদৃষ্টি ও আমাদের দাবিগুলো না মানা হলে ১ মাস পর অর্থাৎ আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
সিনেমা হল চালানোর মত দেশে পর্যাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে না। যাও হচ্ছে তাতে মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় দর্শকরা সিনেমা দেখছে না। লোকসান গুণতে গুণতে হতাশ প্রযোজকেরা। অন্যদিকে আয় নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা। এছাড়া দেশের বাইরের ছবি প্রদর্শনেও রয়েছে কঠোর নিয়ম। তারপরও তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ শর্ত আর নিয়মকানুন। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। লোকসান গুণতে গুণতে পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে।
বিদেশি ছবি আমদানির সহজ নীতিমালা এবং দেশীয় ছবি নির্মাণ বাড়াতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হল মালিকরা দাবি করেন, দেশীয় ছবির সংকটে ইন্ডাস্ট্রি। তাই সাফটা চুক্তিতে সিনেমা আমদানির নীতিমালা সহজ করতে হবে।
প্রয়োজনে হলিউডের ছবির পাশাপাশি বলিউডের হিন্দি ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনেই আনার সুযোগ করে দিতে হবে বলেও দাবি করেন সংগঠনটির সভাপতি ও মধুমিতা মুভিজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।
তিনি বলেন, “হলে সিনেমা নেই। দেশে ছবি তৈরি হচ্ছে না। বিদেশের ছবিও সহজভাবে আনা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক হল মালিক এই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু, আমরা যারা আছি তাদের হলগুলো সচল রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি খুব প্রয়োজন।”
“আমরা দেশে সিনেমা নির্মাণ বাড়ানোর উদ্যোগ চাই। সেই সঙ্গে বিদেশি ছবি আমদানি করতে সহজ প্রক্রিয়া চাই। আমাদের এই দাবিগুলো না মানা হলে আজকের ঠিক এক মাস পর অর্থাৎ আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব হল বন্ধ করে দেওয়া হবে,” যোগ করেন নওশাদ।
তার মতে, “একটা দেশে বছরের প্রথম দুই মাসে কোনও চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। সেখানে কীভাবে হলগুলো টিকে থাকে সেটা কি কেউ ভাবেন? দুই মাস পর যা মুক্তি পেয়েছে সেগুলো চলেনি।”
তাই হল বাঁচাতে সাফটা চুক্তির নীতিমালা আরও সহজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংগঠনটির সভাপতি।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির পক্ষে লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্রের দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আমরা তথ্যমন্ত্রী ও তথ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা কেউই প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানো কিংবা দেশীয় সিনেমা নির্মাণ বাড়ানোর ব্যাপারে এবং উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বাধা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। দেশের প্রেক্ষাগৃহ ১ হাজার ২৩৫ থেকে নেমে এখন ১৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। সিনেমা নির্মাণও বছরে এখন ৩৫ থেকে ৪০ টির মতো। এত কিছুর পরও পরিচালক এবং শিল্পীরা তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে, এই অজুহাতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বিরোধিতা করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘যখন থেকে আমরা উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির দাবি করে আসছি, তখন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করে বলা হচ্ছে, ভালো পরিচালক আসছেন। আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তার উদাহরণ কি সিনেমা হলের সংখ্যা কমে ১৭৪ হওয়া? গত বছর দেশীয় ছবির নির্মাণ সংখ্যা ৩৫–এ নেমে আসা?’ ‘উচ্চহারের বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় সিনেমা হল মালিকদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।’ ‘দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পরিচালক ও শিল্পীরা ছবির গুণগত মান উন্নত করতে পারেননি। অথচ এটা সত্য যে, পাকিস্তান আমলে ভারতীয় বাংলা, হিন্দি সিনেমা ও পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের নিজেদের সিনেমা ব্যবসাসফল যেমন হয়েছে, তেমনি শিল্পমানও ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি আমির হামজা, সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ, উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, কার্যনির্বাহী সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন প্রমুখ।
পিবিএ/এফএস