অদম্য রানা মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যায়, মিলছে না হুইলচেয়ার


পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: শারিরীক প্রতিবন্ধী রানা তার মায়ের কোলে চড়েই স্কুলে আসা-যাওয়া করে। ছয়বছর বয়সে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন তার দুটি কিডনিতেই বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেকারণে তার বিকল (পঙ্গু) দুই পায়ে পানিবাহিত রোগ আক্রান্ত করেছে। এতোকিছুর পরও পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী রানা। বর্তমানে সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।
এদিকে দিন দিন অদম্য রানা বেড়ে উঠলেও তাকে বয়ে বেড়ানো সেই মায়ের শারিরীক শক্তি ক্রমশই কমে আসছে।

বর্তমানে ১২ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলেকে কোলে চড়িয়ে স্কুলে আনা-নেওয়ার মতো সেই শক্তি এখন আর এই মায়ের নেই। তাইতো হাঁপিয়ে উঠা অসহায় মাতা সুহেদা বেগমের আকুতি প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য একটি হুইলচেয়ারও মিলছে না, আর মায়ের অসহনীয় কষ্টও লাঘব হচ্ছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ জাবেদ মিয়ার ছেলে প্রতিবন্ধী রানা মিয়া। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রানা দ্বিতীয়।
পরিবারের লোকজন জানান, বাড়িঘরে প্রতিবন্ধী রানা চলাচল করে কাঠের তৈরি দুইটি পিঁড়িতে ভর করেই। আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে তাকে হুইলচেয়ার কিনে দেয়া যাচ্ছে না। রানার দুটি কিডনিতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে তার দুই পায়ে পানি বাহিত রোগ আক্রান্ত করেছে। সে লেখাপড়ায় চরম মনোযোগী। প্রতিদিন মায়ের কোলে চড়েই সে স্কুলে যায়। যেদিন তার মায়ের শরীর অসুস্থ থাকেন, সেইদিন আর রানার স্কুলে যাওয়া হয় না।

প্রতিবন্ধী রানা মিয়া জানায়, সে নিয়মিত স্কুলে যেতে চায়। তার ইচ্ছে পড়ালেখা করে সে সংসারের অভাব ও বাবা-মায়ের দুঃখ দূর করবে। সে প্রতিনিয়ত আল্লাহ’র নিকট দোয়া করে, তার মায়ের শরীর সবসময় যেন সুস্থ থাকে। কারণ মায়ের কোলই রানার চলাচলের একমাত্র ভরসা।

রানার অসহায় পিতা জাবেদ মিয়া বলেন, ছোটখাট দোকান চালিয়ে সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে যায়। ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে রানার চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে শেষ সম্বল কৃষি জমি বিক্রি করে রানার চিকিৎসা করানো হলেও তার কিডনির সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার দুটি কিডনিই খারাপ অবস্থার দিকে। পরিবারের কর্তাব্যক্তি হিসেবে কষ্টে আমার বুক ফেটে যায় এই কারণে ” বছরের পর বছর যাবত ছেলের এবং স্ত্রীর কষ্ট দেখেও একটি হুইলচেয়ার কিনে দিতে পারছি না।

শাহজাদাপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ ইয়াছমিন বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী রানা এই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। সে প্রতিদিন মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে আসে। তাকে একটি হুইলচেয়ার এনে দেওয়ার জন্যে আমরা চেষ্টা করছি বহুদিন যাবত।

পিবিএ/এইএস/এমএসএম

আরও পড়ুন...