ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি এই হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ১৩ হাজারের বেশি। এমন তথ্যই জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এছাড়া গাজার অন্য শিশুরা গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, ইসরায়েল গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ১৩ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে। এছাড়া আগ্রাসনের কারণে অন্যরাও গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের ‘কান্না করার শক্তিও নেই’।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল রোববার সিবিএস নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেছেন, ‘আরও হাজার হাজার শিশু আহত হয়েছে বা তারা কোথায় আছে তাও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারে ৃ আমরা বিশ্বের অন্য কোনও সংঘাতে শিশুদের মধ্যে এতো মৃত্যুর হার দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শিশুদের ওয়ার্ডে ছিলাম যারা মারাত্মক রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টিতে ভুগছে, পুরো ওয়ার্ড ছিল একেবারেই শান্ত। কারণ বাচ্চাদেরৃ এমনকি কান্না করার শক্তিও নেই।’
রাসেল বলেন, ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া ঠেকাতে সাহায্য ও সহায়তার জন্য গাজায় সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো নিয়ে যাওয়া ছিল ‘বিশাল আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ’।
এদিকে ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ) অনুসারে, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন শিশু এখন তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি আরও সতর্ক করেছে, পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে নিরলস ইসরায়েলি বোমা হামলার সম্মুখীন হওয়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
যুদ্ধে নারী ও শিশুসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের নিহত হওয়া, গাজায় অনাহার সঙ্কট এবং দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হওয়া মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণে বাধা দেওয়ার অভিযোগের কারণে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ বেড়েছে।
এর মধ্যেই রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মিসরের সীমান্তবর্তী শহর রাফাহতে স্থল হামলার হুমকির পুনরাবৃত্তি করেছেন। দক্ষিণ গাজার এই শহরে বর্তমানে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্র্বতী রায়ে এই আদালত তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।