শ্যালক দুলাভাইয়ের পারিবারিক দুদক চক্র,গ্রেফতার ৩

দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলেই একটি চক্র তাদের টার্গেট করত। এরপর সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট থেকে ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখায়। এরপর কিছু দিন পরে দুদকের সহকারী পরিচালক পরিচয়ে ফোন করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিবেদন বলে দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো একটি চক্র।

সম্প্রতি দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতরাণার ঘটনায় দুদক বাদী হয়ে ডিএমপির রমনা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় কয়েকটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। এরই সূত্র ধরে মামলার তদন্তে নেমে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

ডিবি বলছে, শ্যালক-দুলাভাইসহ পারিবারিক এই প্রতারক চক্রটি কখনো সাংবাদিক আবার কখনো দুদক কর্মকর্তা। আর এই পরিচয়ের জন্য তারা বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশনের সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড এবং দুদক কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা ফিরোজ খান (৫২) তার শ্যালক মো. হাসান মুন্না (২৮) ও মুন্নার শ্যালক মো. রিয়াজ (১৮)। তাদের সবার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলায়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাংবাদিকদের পচিয়পত্র, ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন মডেলের ১১টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটের ২৯ টি সিম কার্ড ও দুদক কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র প্রথমে সাংবাদিক ও দুদকের সহকারী পরিচালক পরিচয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিউজ হলে তারা সে নিউজের ডিটেলস জেনে নিতো। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সাংবাদিক পরিচয়ে নিউজের বিষয়ে জানিয়ে সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে নানাভাবে আলোচনা করে। এরপর দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত।

তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বারগুলো বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা।

গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার প্রতারকদের বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, তাদের কাছে এনটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার, কখনও এসএটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারসহ একাধিক টিভি ও পত্রিকার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় পত্র ব্যবহার করে এই সকল প্রতারণার কথা স্বীকার করত।

হারুন বলেন, রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দুদকের উল্লেখিত ছয়টি সিম নম্বর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। অভিযানে প্রতারকদের কাছ থেকে তিনটি সিম উদ্ধার করা হয় যা তারা দুদক পরিচয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হত। এই চক্রটির বিরুদ্ধে একই অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা চার দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাদের প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন...