তীব্র দাবদাহের মধ্যেই গণতন্ত্রের উৎসবে মেতেছে গোটা ভারত। পশ্চিমবঙ্গেও চড়েছে ভোটের পারদ। প্রথম দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে হয়েছে ভোট গ্রহণ। তীব্র গরমে অস্বস্তি আর বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচন শেষ হলো।
তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কোচবিহারে। অভিযোগ উঠেছে, বুথ জ্যাম, রিগিং, ভোট লুট, ভোটদানে বাধা, কোথাও বোমা উদ্ধার, কোথাও ইট নিক্ষেপসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে এখানে। আবার কোথাও শাসক-বিরোধী উভয় দলের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি সমর্থক ও কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
বিজেপির অভিযোগ, কোচবিহারের গিরিয়াকুটিতে বেছে বেছে তাদের সমর্থকদের বাড়ি চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরে বাঁশ-লাঠি-লোহার রড নিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। শীতলকুচিতে দুর্বৃত্তদের আঘাতে সাধারণ এক ভোটারের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসা নেওয়ার পরে তিনি সুস্থ হন।
এদিকে, এই তিন কেন্দ্রে নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া, পোলিং এজেন্টকে ব্যাপক মারধোর; এমনকি, পোলিং এজেন্টদের বাড়ির সামনে বোমা রেখে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির বুথ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তবে জলপাইগুড়ির ডাব গ্রাম ফুলবাড়িতে বিজেপির বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জি বেশ কয়েকজন বহিরাগত লোক নিয়ে জোর করে বুথে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ারের তুলসীপাড়া চা বাগানে ৪টি বুথে বিজেপির এজেন্টদের বসতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন বিজেপির প্রার্থী মনোজ টিগ্গা।
এদিকে প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে মৃত্যু হয় এক স্থানীয় সিপিআইএম নেতার। ধূপগুড়ি ব্লকের বিনয় সাহা মোড় এলাকায় ১৫/১২৪ নম্বর বুথের বাইরে থাকা সিপিএমের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী সিপিএম নেতা প্রদীপ দাস। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাকে উদ্ধার করে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নির্বাচন চলাকালীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩৮৩ টি অভিযোগ পড়েছে। তার মধ্যে কোচবিহার থেকে ১৭২টি, আলিপুরদুয়ার থেকে ১৩৫ টি ও জলপাইগুড়ি থেকে ৭৬টি অভিযোগ পড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের এই তিন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, নির্বাচনী বিশৃঙ্খলা রোখার দায়িত্ব কমিশনের। আমার বিশ্বাস, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোচবিহারে ৭৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৭৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও জলপাইগুড়িতে ৭৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাত দফা শেষ হবে। সেক্ষেত্রে আরও ছয়টি দফার ভোট গ্রহণ বাকি রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল, তৃতীয় দফায় ৭ মে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে, পঞ্চম দফায় ২০ মে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে ও সপ্তম দফার ভোট গ্রহণ হবে ১ জুন। ভোট গণনা শুরু হবে ৪ জুন।