যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমবেত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চলছে বিক্ষোভ। সাদা কাপড় জড়িয়ে তার ওপর দেওয়া হয়েছে লাল রং, যেন রক্তমাখা কাফনে মোড়ানো সারি সারি শিশুর মরদেহ। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় নিহত প্রায় ১৩ হাজার শিশুর প্রতি সমবেদনা ও শোক জানাতেই শিক্ষার্থীদের এই আয়োজন।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদ জানাতে স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নেন ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা চান, ইসরায়েলের সঙ্গে যেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকে। এই বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে হামলা চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত ২৮ শিক্ষার্থীকে।

শুধু ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কয়েক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ। সেখানেও ব্যাপক দমন–পীড়ন ও ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত বিক্ষোভকারীকে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলছে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই হামলায় উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যাঁদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। এর প্রতিবাদে সপ্তাহখানেক আগে প্রথম কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় হামলায় সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্জন করতে হবে। এ দাবিতে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত সপ্তাহে সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইলহান ওমরের মেয়েও।

বৃহস্পতিবার বিবিসিকে ইলহান ওমর বলেন, কলাম্বিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল মাত্র ৭০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে। তবে তাঁদের ওপর পুলিশ ধরপাকড় চালালে হিতে-বিপরীত হয়। এর জেরে বিক্ষোভ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থানে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জটাউন ইউনির্ভাসিটি, ইউনির্ভাসিটি অব টেক্সাস, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, এমারসন ইউনিভার্সিটি, ইয়েল ইউনির্ভাসিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্লুমিংটন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলে, ইউনির্ভাসিটি অব মিশিগানসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

এর মধ্যে গত কয়েক দিনে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ৯৩ জন, ইউনির্ভাসিটি অব টেক্সাস থেকে ৫৭, এমারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ১০৮, ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ৪৮, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ১২০ ও ইউনিভার্সিটি অব ব্লুমিংটন থেকে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান বাতিল

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের জেরে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্নাতকের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানটি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০ মে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুষ্ঠান বাতিলের ওই ঘোষণা দেওয়ার আগে এ মাসের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, অজ্ঞাত নিরাপত্তা হুমকির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তবে আসনা তাবাসসুমের অভিযোগ ছিল, তিনি ঘৃণার শিকার হয়েছেন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে মামলা

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আইনে মামলা করেছে প্যালেস্টাইন লিগ্যাল নামের একটি সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার লোকজনের অধিকার রক্ষায় কাজ করে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার সংগঠনটি অভিযোগ এনে বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরকে তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন...