ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন বিজেপিকে দিশাহারা করে তুলেছে। এতটাই যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করে বলেছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জামিন স্বাভাবিক ও রুটিনমাফিক নয়। ব্যতিক্রমী। ওই সিদ্ধান্ত বিশেষ সুবিধা।
শুধু তা–ই নয়, কেজরিওয়ালের জামিন খারিজ করে তাঁকে আবার জেলে ঢোকানোর জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও জানায়। তা খারিজ করে দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তাঁরা যে রায় দিয়েছেন, তা অনেক ভেবেচিন্তে দেওয়া। আইনের চোখে যা যুক্তিযুক্ত তা–ই করেছেন। কেজরিওয়ালকে ২ জুন কারাগারে ফিরতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেন, ওই রায় মোটেই ব্যতিক্রমী নয়।
আবগারি (মদ) মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। সেই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কেজরিওয়াল। তাঁর দাবি, নির্বাচনী প্রচারে তিনি যাতে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে আবেদন খারিজ হয়ে গেলেও সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালের বক্তব্য মেনে নেন এবং তাঁকে শর্তাধীনে জামিন দেন। সেই থেকে কেজরিওয়াল নিরন্তর প্রচার করে চলেছেন। বিজেপির রাজনীতিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন। তাঁর জনসভা ও রোড শোতে বিপুল জনসমাগম হচ্ছে।
কেজরিওয়ালের দল বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক। দিল্লি, হরিয়ানা ও চন্ডীগড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে লড়ছে দুই দল। তাঁর মুক্তি অভূতপূর্ব সাড়াও ফেলেছে। রাজধানীর ৭টি আসনে আপ ও কংগ্রেস একযোগে প্রচার চালাচ্ছে। তেমনই এক প্রচারে কেজরিওয়াল জনতার উদ্দেশে বলেন, মানুষ যদি তাঁদের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে তাঁকে আর কারাগারে ফিরে যেতে হবে না। তিনি বলেছিলেন, মানুষের সেই ক্ষমতা আছে।
ওই ভাষণের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে যায় ইডি। ইডির পক্ষে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, কেজরিওয়াল বলেছেন, মানুষ ভোট দিলে তাঁকে আর কারাগারে যেতে হবে না। এই আবেদন জানিয়ে তিনি অবশ্যই নির্বাচনবিধি ভঙ্গ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট যে শর্তে তাঁকে জামিন দিয়েছেন, তা লঙ্ঘন হয়েছে। বস্তুত ওই মন্তব্য দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি চপেটাঘাত। তাঁর আরজি ছিল, অবিলম্বে জামিন বাতিল করে কেজরিওয়ালকে কারাগারে পাঠানো হোক।
সলিসিটর জেনারেলের আরজির বিরুদ্ধে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপির শীর্ষ নেতারাও নানা মন্তব্য করে চলেছেন।
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপংকর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ ইডির আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। তাঁরা বলেন, কেজরিওয়ালের যে মন্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি সরব, তা তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা। কারও কোনো ধারণায় তাঁরা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। জামিনসংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়েছেন, তা অনেক ভাবনাচিন্তা করে নেওয়া। কেজরিওয়ালকে ২ জুন জেলে ফিরে যেতে হবে। বিচারপতিরা বলেন, তাঁরা কাউকে কোনো বিশেষ অনুগ্রহ করেননি। ওটা ব্যতিক্রমী কিছু নয়। যা করেছেন আইনের মধ্যে থেকে।
বিচারপতিদের ‘ব্যতিক্রমী কিছু নয়’ মন্তব্য অমিত শাহর জবাব বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত বুধবারই অমিত শাহ এক সাক্ষাৎকারে কেজরিওয়ালের জামিন সম্পর্কে ওই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তাঁকে বলা হয়, কেজরিওয়ালের মুক্তি ‘ইন্ডিয়া’ জোটে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। তাঁর জামিন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমিত শাহ বলেন, ‘বিচারপতিদের দেখা দরকার রায় মানা হচ্ছে নাকি তার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। রায় প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের অধিকার আছে নিজেদের মতো করে আইনের ব্যাখ্যা করার। কিন্তু আমার কাছে এটা স্বাভাবিক রায় ছিল না। ব্যতিক্রমী। রুটিন ও স্বাভাবিক নয়। অনেকের ধারণা কেজরিওয়ালকে বিশেষ সুযোগ (স্পেশাল ট্রিটমেন্ট) দেওয়া হয়েছে।’