যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন। তার সফর ঘিরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে বরফ গলার বার্তা ছিল। কিন্তু গত ২০ মে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন মনোভাব কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয় জল্পনা। তবে এবার সেই জল্পনার ডালপালা ছেঁটে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে নতুন বার্তা দিয়েছেন প্রভাবশালী দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক এই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি।
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড লু জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
দুদেশের সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে লু বলেন, ‘আমরা পেছনে নয়, সামনের দিকে তাকাতে চাই।’
গতকাল বুধবার (১২ জুন) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে মার্কিন এই সংবাদ মাধ্যমটি।
এতে ডোনাল্ড লু দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্টের ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, নারী অধিকার ও উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্টসহ অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্র সুরক্ষা ও প্রসারের বদলে ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা সামনের দিকে তাকিয়ে আছি, পেছনে নয়। আমরা বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত এবং আগ্রহী। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হবে। নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় আমরা আমাদের অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে নিজেদের অভিন্ন অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাবার ব্যাপারে আশাবাদী।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ইস্যুতে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুরো নির্বাচনকালীন সময় আমরা নিয়মিত বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার কাজে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে তাদেরকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্তকারী সহিংসতার নিন্দায় আমরা সোচ্চার ছিলাম।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে লু বলেন, যখন আমাদের কাছে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে, তখন আমরা সারা বিশ্বেই নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধের আকারে প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নেই। আমাদের আইনগুলো আমাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা তাদের দুর্নীতির অর্থের গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ মে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ আলাদা করে পূর্ব তিমুরের মতো একটি খ্রিষ্টান জাতি-রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে। এছাড়া তিনি যদি বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য একটি দেশকে অনুমতি দিতেন তবে গত জানুয়ারিতে তাকে ঝামেলামুক্ত পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে ভয়েস অব আমেরিকার প্রশ্নে ডোনাল্ড লু বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। নির্বাচনের সময় আমাদের অগ্রাধিকার ছিল শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা।
আমরা এই অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের উন্নয়নে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করছি।
গত ১৪ মে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ডোনাল্ড লু। সফর শেষে ১৬ মে ঢাকা ছেড়ে যান তিনি।