পিবিএ,ঢাকা: অশ্রুসিক্ত ফুলেল শ্রদ্ধা, স্মৃতিচারণ ও ফুলেল শ্রদ্ধায় রাজন কর্মকারকে চিরবিদায় জানালেন তার কর্মক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)কর্মরতরা। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন।
সোমবার (১৮ মার্চ) বেলা দেড়টার দিকে রাজনের মরদেহ বিএসএমএমইউতে আনার পর বেশ আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে ডেন্টাল বিভাগে রাজনের পদচারণা ছিল, সে বিভাগের সর্বস্তরের কর্মীরা ভীড় জমান কফিনের পাশে। রাজনের স্থির মুখখানা দেখে কেউ কেউ ফুপিয়ে,হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
রাজনের কফিন বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিলন হলে আনা হয়। এরপর কফিন খুলে মরদেহের শেষ দর্শন পর্ব শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, প্রো-ভিসি অধ্যাপক শাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আতিকুর রহমানসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা, চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে শেষ দর্শন ও ফুলেল শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্ব শেষ হয়।
প্রথম ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
দুপুর দুইটার কিছু পরে কফিন তোলা হয় মরদেহবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে। সেখান থেকে মরদেহ নেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীর উদ্দেশে।
রাজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের (বিডিএস) ছাত্র। তার বাবা-মা বার্ধক্যজনিত অসুস্থ্যতায় প্রায় শয্যাশায়ী। তাদের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে টিউশনি করে বিডিএস পাশ করা রাজন বড়।
প্রায় তিন বছর আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বড় মেয়ে কৃষ্ণা কাবেরী মজুমদারের সঙ্গে সংসার হয় রাজনের।
রোববার (১৭ মার্চ) ভোরে ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে রাজনকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রাজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার শ্যালিকা। এর কিছুক্ষণ পর আসেন তার স্ত্রী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তারা জানান, রাজনের আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক (এমআই) হয়েছে।
পরিবার ও সহকর্মী চিকিৎসক-চিকিৎসক নেতাদের অভিযোগ- পারিবারিক কলহের জেরে রাজনকে হত্যা করা হয়েছে বা সরাসরি হত্যা না হলেও মৃত্যু অস্বাভাবিক। এই মৃত্যুর জন্য কৃষ্ণা কাবেরীকে অভিযুক্ত করেন তারা।
বিএসএমএমইউর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ডেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক আলী আসগড় মোড়ল বলেন, শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে লালমাটিয়ার আল মানার হাসপাতালে দীর্ঘ অপারেশন শেষে বাসায় ফেরেন রাজন। আমাদের চিকিৎসকরা আল মানারে গিয়ে কথা বলেছেন। রাতে রাজনের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা জানিয়েছেন- রাজনের আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। স্বভাবসূলভ হাসিখুশি আচরণের মধ্য দিয়েই কাজ শেষ করে তিনি বিদায় নেন। আমরা মনে করছি, তার মৃত্যু অস্বাভাবিক। এটাকে বলা হচ্ছে নাকি এমআই (আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক)। কিন্তু এ ধরনের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ রাজনের মৃতদেহে দেখতে পাননি আমাদের সহকর্মী চিকিৎসকরা।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে রাজনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন সোহরাওয়ার্দীর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা। তিনি বলেন, রাজনের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। আরও সুক্ষ্ম পরীক্ষার জন্য ভিসেরা নমুনা পাঠানো হয়েছে সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে।
অন্যদিকে, পরিবার ও সহকর্মী চিকিৎসক-চিকিৎসক নেতাদের জোরালো দাবির মুখে ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে রাজন কর্মকারের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেছে।
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মখর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় দৈনিক জাগরণকে বলেন, মৃতের মামা সুজন কর্মকার বাদি হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। মরদেহ পোস্ট মর্টেমের পর বাকি কাজ করা হবে।
পিবিএ/জা/হক