পিবিএ,ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএনপি ছাড়ছেন প্রভাবশালী নেতা ও এমপিরা। অনেক নেতা ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। দলের এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে অনেকে হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদত্যাগের কয়েকটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেক ব্যবসায়ী নেতাকে বিদেশে যেতে বাধা দিচ্ছে সরকার। কারও কারও পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হচ্ছে না।
আবার অনেকের ব্যবসায় কর, ভ্যাটসহ নানা ঝামেলা রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেক নেতার ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা। ভবিষ্যতে আরও হয়রানির শিকার হতে পারেন- এমন শঙ্কায় নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
পদত্যাগকারী কয়েক নেতা দলের হাইকমান্ডকে এমনটা জানিয়েছেনও। ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা, রাজনৈতিক হয়রানি থেকে নিষ্কৃতি পেতেই তারা পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। তবে পদ-পদবি নিয়ে অসন্তোষ ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মূল্যায়ন না করাও পদত্যাগের আরেকটি কারণ বলেও স্বীকার করেন ওই নীতিনির্ধারক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কার এবং দল থেকে পদত্যাগের বিষয়ে করণীয় নিয়ে সম্প্রতি দলের সিনিয়র নেতারা আলোচনা করেন। দল ছেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করা হয়।
পদত্যাগের পাশাপাশি বহিষ্কার নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। গত ২০ দিনে তৃণমূলের দেড় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের অধিকাংশই বহিষ্কার হয়েছেন।
দলের শৃঙ্খলা ফেরাতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান নীতিনির্ধাকরা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক নেতাকে বহিষ্কার দুঃখজনক।
তবে দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে এর বিকল্প ছিল না। পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুসময়ে অনেকেই দলে ভিড় করেন। দুঃসময়ে নিজেদের রক্ষায় কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে দলে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, এসব পদত্যাগে বিএনপির রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। যারা যাচ্ছেন তারা রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকারের নানামুখী চাপের কারণে কেউ কেউ পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন।
আমরা এসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব নেতা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বহিষ্কার করছে না বিএনপি। তারা বিজয়ী হলে কিংবা পরবর্তীকালে দলে ফেরার আবেদন করলে তাদের ক্ষমা করে পদ ফিরিয়ে দেয়া হতে পারে। আর যারা স্বপদে থেকেই ভোটে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে বহিষ্কার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটা বলতে গেলে একটা রুটিন কাজ। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ায় রুটিনমাফিক তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
পিবিএ/এফএস