মোহাম্মদপুরে বিহারী ক্যাম্পে সংঘর্ষ, নেপথ্যে মাদকের আধিপত্য

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকান হিসেবে পরিচিত বিহারি ক্যাম্পের বোবার বিরিয়ানি।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলতাফ বিরিয়ানি থেকে মাদক বিক্রিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তাই বিহারি ক্যাম্পের চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সঙ্গে মিলে মাদকের আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ ও মারামারিতে জড়িয়েছেন। গত পাঁচদিন ধরে বিরিয়ানি বিক্রি বন্ধ রেখে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিমের সঙ্গে মিলে প্রতিপক্ষ হঠাতে ব্যস্ত তিনি।

ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গত শবে বরাত থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ হচ্ছে জেনেভা ক্যাম্পে। একেকবার এই সংঘর্ষে জড়িয়ে যাচ্ছে একেক পক্ষ। তবে সকল পক্ষই মাদক সংশ্লিষ্ট। এরইমধ্যে সংঘর্ষ করে অনেকেই ক্যাম্প ছাড়া হয়েছেন। আবার অনেকে দীর্ঘদিন বাইরে থেকে এখন এসেছেন সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিতে।

জেনেভা ক্যাম্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে ছিলো পচিশ ও ইশতিয়াক। এরমধ্যে পচিশ র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে পালিয়ে যান ইশতিয়াক। পরে ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় করোনাকালে তার মৃত্যু হয়। পচিশ ও ইশতিয়াকের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে সবার আগে রয়েছেন চুয়া সেলিম। মাথার ওপর ৩০টির বেশি মাদক মামলা। তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি।

ঈদুল আজহার আগে জেনেভা ক্যাম্পে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামে। তবে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে গত এক সপ্তাহ ধরে। মাদকের আধিপত্য নিয়ে ফের সংঘাতে জড়িয়েছে উর্দুভাষাভাষী ক্যাম্পের জনগোষ্ঠীর একাংশ।

সূত্র জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে মূল হোতা চুয়া সেলিম। নিজের অবস্থান শক্ত করতে তিনি সঙ্গে রেখেছেন বিরিয়ানি বিক্রিকারী পরিবার হিসেবে পরিচিত বোবা বিরিয়ানির পুরো পরিবারকেই। আর তাদের বিপরীতে রয়েছেন ভূঁইয়া সোহেল, বাবলু, ব্যাটারি। দীর্ঘদিন পলাতক থাকা চুয়া সেলিম সম্প্রতি জেনেভা ক্যাম্পে এসেছেন। তার উপস্থিতি ও নেতৃত্বেই শুরু হয়েছে সংঘর্ষ।

সোমবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাতে চুয়া সেলিম অস্ত্র হাতে জেনেভা ক্যাম্পে আসেন বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা।

সূত্র জানিয়েছে, চুয়া সেলিমের পক্ষে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেনেভা ক্যাম্পে পুরনো ও পরিচিত বিরিয়ানি বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান বোবা বিরিয়ানি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. আলতাফ নিজেই নেমেছেন সংঘর্ষে।

মাদকের আধিপত্যের লড়াইয়ে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা গেছে আলতাফের দুই ভাই ইমরান ও কামরানকে। যারা দুইজনই মাদক কারবার, কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী চক্রের হোতা। আলতাফের সাবেক বোন জামাই সাজিদ ওরফে নাজায়েজ সাজিদ। সংঘর্ষের মাঝে এক নারীর শ্লীলতাহানি ও একজন গর্ভবতী নারীকে মারধরের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সাজিদ।

এছাড়া জেনেভা ক্যাম্পের মাদক হাতবদল ও কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়া আলতাফের ভাগনে সামিরও এই সংঘর্ষে সরাসরি যোগদান করেছেন।

বোবা বিরিয়ানি পরিবারের পাশাপাশি মাদকের আধিপত্যের লড়াইয়ে মাঠে দেখা গেছে মো. আতিক নামে একজন মাদক ডিলারকে। যার নেতৃত্বে জেনেভা ক্যাম্পে ২০ থেকে ২৫ জন সেলসম্যান রয়েছে। নব্বই দশকে পাকিস্তান থেকে এসে জেনেভা ক্যাম্পে আসা মাণ্ডা পরিবারও যোগ দিয়েছে এই সংঘর্ষে। জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী পাকিস্তানি রাজুর ভাই হামজাকে দেখা গেছে এই সংঘর্ষে। চুয়া সেলিমের ভাজিতা সোহেলও জড়িয়েছেন এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে।

সম্প্রতি জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছিলেন বোবা বিরিয়ানির মালিক মো. আলতাফ। তার ভাষ্য মতে, আমার ভাইয়েরা মাদকের সঙ্গে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সংঘর্ষে নিজের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও মো. আলতাফের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেভা ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠন মহাজির রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্ট (এমআরডিএম) এর সভাপতি ওয়াসি আলম বশির বলেন, গত শবে বরাত থেকে সংঘর্ষ হচ্ছে। কারণ তো একটাই মাদক৷ গতকাল সারারাত সংঘর্ষ হয়েছে। বাচ্চাদের পরীক্ষা, কেউ বের হতে পারছে না। সব সময় একটা আতঙ্ক বিরাজ করে।

এ বিষয়ে সরকারের আরও বেশি নজর দেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের খবরে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঞা বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন...