কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এরই প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গণহারে পদত্যাগ করছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ৫০ এর অধিক নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা হামলায় জড়িতদের সঙ্গে বিভাগীয় সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক ফরহাদ কাউসারকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এরই প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শেখ হাসিনা হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরাও সোমবারের হামলার সমালোচনা জানিয়েছেন।
পদত্যাগ করা শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলের আইন বিষয়ক সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা, ভালোবাসার স্থান। আজকের পর থেকে ছাত্রলীগের সথঙ্গ আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কেউ আমাকে ডাকবেন না। দত্ত হল কারও বাপের না’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দুনিয়াই সবকিছু না, আখেরাত বলেও কিছু আছে। যে সংগঠনের কেউ মারা গেলে সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়ে এমন সংগঠনে আমার নাম না থাকুক।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুসরাত সুরভি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে পোস্ট করে বলেন, ‘আমি লজ্জিত যে আমি এমন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন বলেন, ‘দেশের সাধারণ জনগণ যে সংগঠনকে গালাগাল করে সে সংগঠনের পরিচয় আমি বহন করতে চাইনা। আজ থেকে এই সংগঠনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।’
সদ্য ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগকারী ও ২০২১-২২ ব্যাচের তানজিনা আক্তার বলেন, ‘আমিসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬ তম ব্যাচের সকল মেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আজ থেকে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে আমরা যাবো না।’
শিক্ষার্থী ছাড়াও সোমবারের হামলার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।