সোহাগ হাসান,সিরাজগঞ্জ: কোটা আন্দোলনের দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বাচ্চু বলেন, রাতে আওয়ামীগের পদধারী নেতারা বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শহরের ইবি রোড, ইসলামিয়া কলেজ মাঠ ও বিএনপি অফিস এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দফায় দাফায় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকেলের দিকে তারা কোটা আন্দোলনে নিহত ৬ ছাত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় মিছিল থেকে ২নং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। তখন থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে রাত ১০টার দিকে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে, গত (১৬ জুলাই) কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ ২০জন আহত হয়। ফলে সরকারি কাজে বাঁধা ও পুলিশ সদস্যদের ওপরে হামলা, মারপিটের ঘটনায় শহরের ২নং পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহাগ বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন বলেন, দাবি আদায় ও কোটা আন্দোলন বর্তমানে ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল আর ছাত্রশিবির আন্দোলনের নামে নাশকতা শুরু করেছে। তারা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করেছে। পরে আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের উপরও হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বাচ্চু বলেন, বিএনপি নিহত ৬ ছাত্রের গায়েবানা জানাযা করেছে। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরপরের ঘটনাগুলো কারা করেছে আমরা জানিনা। হঠাৎ করে গতকাল রাত ১০টার দিকে শুনি আওয়ামীলীগের পদধারী নেতারা বিএনপি অফিসে আগুন দিয়েছে।
সাঈদুর রহমান বাচ্চু আরও বলেন, এই আন্দোলন যেহেতু ছাত্রদের সেখানে ছাত্রদল অংশ গ্রহণ করতেই পারে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামে ছাত্রদের সংগঠন। তবে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী সেখানে ছিল না। সংঘর্ষে ছাত্রদল ও সাধারণ ছাত্রদের অনেকেই আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় মিছিল থেকে ২নং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। শহর ও মহাসড়কে নাশকতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে যারাই আইনশৃংখলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।