গণিতে আন্তর্জাতিক পদক পেলেন জাওয়াদ চৌধুরী

পিবিএ,ঢাকা: আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) অবশেষে সোনার পদক পেল বাংলাদেশ। রোমানিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহরে ৫৯তম আইএমওতে দেশের জন্য প্রথম সোনার পদকটি জিতেছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। সে ৪২ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৩২। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এ বছর আইএমওতে এটাই একমাত্র সোনা।
বাংলাদেশ দলের অপর তিন সদস্য তাহনিক নূর সামিন (২৩ নম্বর), জয়দীপ সাহা (১৯ নম্বর) ও তামজিদ মুর্শেদ রুবাব (১৮ নম্বর) পেয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। অপর দুই সদস্য রাহুল সাহা ও সৌমিত্র
দাস সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মোট ১১৪ নম্বর পেয়ে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে পুরস্কার বিজয়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এবার ২১২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ফেডারেশন (২০১) ও চীন (১৯৯) যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ১৩২ নম্বর নিয়ে ভারত রয়েছে শীর্ষে। তিনটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ পেলেও ভারতের শিক্ষার্থীরা কোনো সোনার পদক পায়নি। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা (৪৭), পাকিস্তান (৩৫), মিয়ানমার (২৩) ও নেপালের (৫) অবস্থান যথাক্রমে ৭২, ৮০, ৮৫ ও ১০৫।
১১৬টি দেশ নিবন্ধন করলেও শেষ পর্যন্ত ১০৭টি দেশের ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের জাওয়াদ চৌধুরীর অবস্থান ২৭তম। এ বছর এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপের দেশগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো করেছে।
দীর্ঘ ১৪ বছরের ক্রমাগত উৎকর্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবার সোনার পদক পেল। এই সময়ে বাংলাদেশের অর্জন একটি সোনা, ছয়টি রৌপ্য পদক, ২২টি ব্রোঞ্জ ও ২৭টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
প্রথম আলোতে সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ২০০১ সালে ‘নিউরনে অনুরণন’ নামে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৩ সালে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজকের দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর সারা দেশে গণিত উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। আর নির্বাচিতরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে।
এবারের সোনাজয়ী বাংলাদেশের জাওয়াদ চৌধুরী গত বছর আইএমওতে রৌপ্য পদক পেয়েছিল। সেবার এক নম্বরের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল স্বর্ণপদক। দেশের পক্ষে প্রথম সোনার পদক জয় করে সে নিজের সাফল্যে খুবই খুশি। পরিশ্রম ও লেগে থাকাই তার সাফল্যের মূল বলে সে মনে করে। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে আনন্দিত দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার। তিনি বলেন, আজকের এই অর্জনের পেছনে ধারাবাহিকতা ছিল।

বাংলাদেশ গণিত দলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ অর্জন ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতের প্রতি আরও উৎসাহিত ও দক্ষ করবে।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকে একটা সোনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, সেটি এখন আমাদের হাতে এসেছে। আমি জানি, এখন থেকে আসতেই থাকবে। আমার মনে হচ্ছে পথের ধারে একটা ছোট গাছের চারা লাগিয়েছিলাম, সবাই সেই গাছের চারাটি বুকে আগলে রেখেছে, হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি সেই ছোট চারাটি কত বড় একটি গাছ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদদের এই অর্জন জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গৌরবের পথে এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
শুরু থেকেই গণিত অলিম্পিয়াডে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আহমদের উৎসাহী উদ্যোগে এই যুক্ততা শুরু হয়েছিল। সোনা জয়ের খবরে তিনি প্রথম আলোর কাছে তাঁর উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করেন।
গণিত দলের সোনা জয়ের খবর পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে বলে জানান ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন। তিনি মনে করেন, এ অর্জন জাতির জন্য এক বিরাট সম্মান বয়ে আনবে। নতুন প্রজন্ম আমাদের চেয়ে অনেক মেধাবী, এই অর্জন তারই প্রমাণ। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক বরাবরের মতো গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে থাকবে।
সোনাজয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামে। ছেলের অর্জনের খবর শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তার মা সৈয়দা ফারজানা খানম। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো থেকে ফোন করে আমাকে ছেলের এ অনন্য অর্জনের বিষয়টি জানানো হয়। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...