মুহাম্মদ আবুল হুসাইন:
ওগো ছোট্ট বন্ধুরা
জানো নাকি তোমরা
আকাশ কত্ত বড় ?
জানতে হলে পড় !
হ্যা সোনামনিরা, তোমরা কি কল্পনা করতে পার আকাশটা কত্ত বড়? কত্ত কী যে আছে ওর ভিতর!
বখতিয়ার : কেন দেখাই তো যাচ্ছে – আকাশ ইয়াব্বড়!
উহু, হল না, আকাশ ইয়াব্বড় থেকেও ইয়াব্বড়।
মানে?
মানে তোমরা যে আকাশ টা দেখছ সেটাই সব আকাশ না। এ আকাশের বাইরেও আছে আরো অনেক আকাশ।
মায়িশা: আহা মামা একটু খোলাসা করে বল না।
আলী : ‘যা দেখিনা দুই নয়নে, তাহা বিশ্বাস করি কেমনে?’
এই তো বোকাদের মত করে একটি কথা বললে! আরো বোকা, দেখলে আবার বিশ্বাস কী? যা দেখা যায় না তাই তো বিশ্বাস করতে হয়। চর্মচোখে সব কি আর দেখা যায়? তাই বলে দেখা যায় না এমন অনেক কিছু কি আমরা বিশ্বাস করি না? এই যে মহাকাশে কত কী যে রহস্য লুকিয়ে আছে, সব কি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই? কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন বড় বড় যন্ত্র, টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে এসে আমাদেরকে সেগুলোর কথা বলেন তখন আমরা সেগুলো বিশ্বাস করব না কেন? এখন শোন কাজের কথা – তোমরা তো জানো, আমাদের এই পৃথিবীটা মাঝারি সাইজের একটি গ্রহ। এ রকম ছোট-বড় আরো কয়েকটি গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে মহাকাশে আবর্তিত হচ্ছে এবং তৈরি করেছে একটি সৌর-পরিবার বা সৌরজগত। আমাদের সূর্যটি হলো একটি নক্ষত্র। এই নক্ষত্র বা সূর্যের পরিবারে আমাদের গ্রহের সংখ্যা হলো ৯টি। যথা – বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। উল্লেখ্য, আমাদের প্রত্যেকটি গ্রহের আবার এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। যেমন চাঁদ আমাদের একটি উপগ্রহ। সৌরজগতে এ রকম ৪৪টি উপগ্রহ রয়েছে।
আমাদের সূর্য একটি মাঝারি আকারের নক্ষত্র। তোমরা কি জান এই পৃথিবীটার তুলনায় সূর্য কত বড়? কল্পনা করতে পার, সূর্যটা পৃথিবীর তুলনায় প্রায়…
লিপি : মামা, মামা, আমি জানি – সূর্যটা পৃথিবীর তুলনায় প্রায় তের লক্ষ গুণ বড়।
বখতিয়ার : তের লক্ষ…!
সোহেল : হ্যা, এর চেয়েও বড় নক্ষত্র আছে, সেগুলোর নাম জায়ান স্টার।
আর গ্যালাক্সি ! শুনলে তো এখনি তোমাদের মাথায় টাস্কি লেগে যাবে।
নূপুর : গ্যালাক্সি কী মামা ?
গ্যালাক্সি হলো নক্ষত্রপুঞ্জ। বলা হয় একেকটি গ্যালাক্সি যেন একেকটি নক্ষত্রের শহর। আমাদের সূর্যটা যে গ্যালাক্সিতে বাস করে সে গ্যালাক্সির নাম হলো ‘মিল্কিওয়ে’। গ্যালাক্সিটার মাঝখানে অত্যাধিক বিকিরণের কারণে দুধের মত ধবধবে সাদা এক ধরণের পথের চি দেখা যায়। এ কারণেই গ্যালাক্সিটার এ নাম হয়েছে। বলতে পারো এর মধ্যে কয়টি নক্ষত্র আছে ? বিশ হাজার কোটির উপর!
নূপুর : ‘বিশ হাজার কোটি… !’
লিপি : ওরে বাবারে!
নূপুর : গ্যালাক্সির পাশে আমাদের সূর্যটাকে রাখলে কেমন দেখা যাবে মামা?
আলী : ইঁদুর ছানার মত।
বখতিয়ার : দূর বোকা, মাছির মত।
মায়িশা: মশার মত।
খালেদ : আর আমাদের পৃথিবীকে ?…
নূপুর : ছোট্ট বিন্দুর মত…
আলী : খুঁজেই পাওয়া যাবে না
আর আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি ‘এ্যাড্রোমিডা’ (অহফৎড়সবফধ)’র কথা জানো? সেটা তো আরো অনেক বড়। সেখানে নক্ষত্র আছে ত্রিশ হাজার কোটির মত।
লিপি : ওরে বাপরে…
মায়িশা : আচ্ছা মামা, এত বড় বড় গ্রহ, নক্ষত্র গ্যালাক্সি আকাশে ভেসে বেড়ায়, একটার সাথে আরেকটার যদি টাক লাগে?
দূর বোকা। প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্র আর গ্যালাক্সির জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক কক্ষপথ।
বখতিয়ার : আব্বু, ধরো, যদি একটা আরেকটার পথে ঢুকে পড়ে, তাহলে!!?
সবাই কি আর তোমার মত দুষ্টু ছেলে? মহাকাশে প্রত্যেকটি জ্যোতিষ্ককে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক মেনে চলতে হয় স্রষ্টার অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক আইন ও বিধান। সেখানে সবাই নিজ নিজ কক্ষপতে চলতে বাধ্য। এক চুল এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধানে চলছে বলেই প্রকৃতি এত সাজানো-গোছানো, এত সুন্দর আর সুশৃংখল। আকাশ জগতের প্রত্যেকটি জিনিসই অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ও সুশৃংখল। তাছাড়া দূর থেকে তারাগুলোকে যত লাগালাগি মনে হয়, বাস্তবে সেগুলো কিন্তু এত কাছাকাছি নয়, তাদের মধে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। এই যে মুক্তার মত নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশের বুকে মিটিমিটি করে জ্বলছে, এদের একটার সাথে আরেকটার দূরত্ব কত জানো? এই যে আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি ‘এ্যান্ড্রোমিডা’, আমাদের থেকে মানে ‘মিল্কিওয়ে’ গ্যালাক্সি থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ২২লক্ষ আলোক বর্ষ।
আলী : আব্বু, আলোক-বর্ষ কী ?
আলোকবর্ষ হলো মহাকাশের দূরত্ব মাপন একক।
আমাদের পৃথিবীতে যেমন আমরা বস্তুর পরিমাপ করি ইঞ্চি, ফুট বা গজ অথবা মিটার, মিলিমিটার দিয়ে দূরত্ব মাপি, তেমনি মহাকাশের স্পেস পরিমাপ করা হয় আলোর গতির ভিত্তিতে।
প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতি হলো ১,৮৬,০০০ মাইল। এভাবে ১ বৎসরের গতিকে বলা হয় এক আলোকবর্ষ। এভাবে ২২ লক্ষ আলোকবর্ষের গতি হিসেব কর।
আলী : ওরে সর্বনাশ! আমি পারব না, মাথা গুলে যায়।
বখতিয়ার : এত দূরত্ব!
মায়িশা: So much distance!
ওমা, আরো আছে না! সবে মাত্র গেলো গ্যালাক্সিদের কথা। এরপর আছে ক্লাস্টার, সুপার ক্লাস্টার, হারকিউলিস সুপার ক্লাস্টার…
আলী : হারকিউলিস সুপার ক্লাস্টার…
হ্যা। নক্ষত্রদের যেমন গুচ্ছ আছে, তেমনি গ্যালাক্সিদেরও গুচ্ছ রয়েছে। গ্যালাক্সিদের গুচ্ছকে বলা হয় ক্লাস্টার। আবার ক্লাস্টারদের গুচ্ছকে বলা হয় সুপার ক্লাস্টার। আর সবচেয়ে বড় সুপার ক্লাস্টারকে বলা হয় হারকিউলিস সুপার ক্লাস্টার।
আলী : এটা কত্ত বড়?
হারকিউলিস সুপার গ্যালাক্সিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় দশ হাজার গ্যালাক্সি রয়েছে।
বখতিয়ার : ওরে বাপ্পস্…
আলী : আব্বু দাঁড়াও, দাঁড়াও, হিসেব করে নিই… একেকটা গ্যালাক্সিতেই আছে ২০/৩০ হাজার কোটি নক্ষত্র, হারকিউলিস সুপার ক্লাস্টারে এরকম ১০ হাজার গ্যালাক্সি আছে?
বখতিয়ার : আচ্ছা আব্বু, মহাকাশে তাহলে এ রকম গ্যালাক্সি আর কয়টি আছে?
বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত প্রায় তের হাজার মিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাপী বি¯তৃত মহাকাশে ১০০ কোটি গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন এবং তাদের অনুমানকৃত মহাবিশ্বের বি¯তৃতি প্রায় বিশ হাজার বিলিয়ন আলোক বর্ষ। তবে এগুলোই কিন্তু সব না। মহাকাশ-বিজ্ঞানীদের ধারণা এ পর্যন্ত তাঁরা ধারণাকৃত মহাকাশের খুব সামান্য কিছুই জানতে পেরেছেন। তাঁদের মতে কল্পিত মহাকাশের শতকরা ৯০ ভাগ এখনো রয়ে গেছে মানুষের অজানা এবং ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।