কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনে গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যসিবাদী কায়দায় গণহত্যা ও দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। আজকেও এবি পার্টির সদস্য সচিব জনাব মজিবুর রহমান মনজুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনারকে গত দুইদিন আগে আইন-শৃংখলা বাহিনী গ্রেফতার করলেও আজও আদালতে উপস্থাপন করে নাই। আমি ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনারকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানাই।
গতকালও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা,লাঠিচার্জ,গ্রেফতার,নির্যাতন চালিয়েছে । শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে নৃশংস হামলায় শত শত ছাত্র জনতাকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলো। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেও সরকার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ন্যাক্কারজনক ভাবে বাধা প্রদান করেছে এবং হামলা চালিয়ে লাঠিচার্জ ,টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে শতাধিক নিরীহ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের একত্রিতও হতে দেয় নাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পাহাড়ার নামে আওয়ামী লীগ ,ছাত্রলীগ,যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার জমায়েত করে ভীতিকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সরকার ।
দেশে জরুরী অবস্থা জারী না করা সত্বেও সভা, সমাবেশ,বিক্ষোভ না করতে দেওয়া এবং হামলা,গ্রেফতার করা সরকারের অগণতান্ত্রিক ফ্যসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা, দমন,নির্যাতন এবং অন্যায় আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে আটককৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নিরাপত্তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্যান্য সমন্বয়কদের হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক ডিবি কার্যালয়ে তুলে এনে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করে ডিবি কার্যালয়েই নজিরবিহীনভাবে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করানোর নাটক সাজানো হয়েছে । তা আপনাদের সাথে দেশবাসীও অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন।ডিবি হেফাজতে রেখে সমন্বয়কদের ওপর চাপ দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষনার নাটক সাজানো হলেও সাধারণ ছাত্রদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহনযোগ্য ছিলো না। সরকার কত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে ,তা ডিবি হেফাজতে আটক রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর বল প্রয়োগ করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষনা দিতে বাধ্য করার ঘটনায় অনুমান করা যায়। একথা কারো বুঝতে বাকি নাই যে, চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জোর করে হাসপাতাল থেকে তুলে এনে ডিবি কার্যালয়ে তাদের হেফাজতে রেখে বল প্রয়োগ করে ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করতে চায় সরকার ।
‘ছাত্র সমন্বয়করা আটক নয়’, একথা ডিবি প্রধান বললেও তাদের কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না ? কেনো তাদেরকে অভিভাবকদের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? ডিবি কার্যালয় নিশ্চয়ই সরকারী বিশ্রামখানা ,অতিথিশালা বা খাবার হোটেল নয়। প্রায় প্রায়ই ডিবি কার্যালয়ে রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে বা তুলে নিয়ে খাবার টেবিলে ছবি তুলে তা গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও সর্বোচ্চ আদালত থেকে ডিবি প্রধানের এই অযাচিত কর্মকাণ্ডকে ‘জাতির সাথে মশকরা’ অবিহিত করা হয়েছে। জাতির সাথে তামাশা, মশকরা করার জন্য অবৈধ সরকার সরকারী এই সংস্থাকে দিয়ে তার রাজনৈতিক হীন স্বার্থ উদ্ধারে অপব্যবহার করছে ।
অন্যান্য আন্দোলন বা সরকারের অগণতান্ত্রিক ,গণবিরোধী কাজের প্রতিবাদকারী রাজনৈতিক দলকে দমন করতে সরকার অন্যায় ভাবে এসব সংস্থাকে অপব্যবহার করছে এবং এর কর্তাব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মত বক্তব্য দিচ্ছেন,আচরণ করছেন,যা কোনো বিবেচনায় সংবিধান ও আইন সম্মত নয়। আমি ডিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দফতর ,সংস্থার কমকর্তা ,কর্মচারীদের প্রতি গণবিরোধী সরকারের নির্দেশে আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং ডিবি হেফাজতে থাকা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। নজিরবিহীন এসব ঘটনা প্রমাণ করে আন্দোলনের শোচনীয পরিণতির ভয়ে ভীত সরকার প্রশাসন ও অবৈধ সরকার প্রধানের অহেতুক রাগ, ক্ষোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, দম্ভ, কটুক্তি, অবহেলা, অবজ্ঞ এবং আলোচনার পরিবর্তে কূটকৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করে দমনের হিংসাত্মক মনোভাব শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ছড়িয়েছে। তাদের নির্দেশেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যডাররা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত লাশ ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে নৈরাজ্য সৃস্টি করেছে। সমগ্র ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। মায়া কান্না করে দায় দায়িত্ব এড়ানো বা অন্যের ওপর চাপানো যাবে না। বিদেশে সরকারের এই হত্যাযজ্ঞকে বর্বরতা আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে বর্বর,স্বৈরাচার বলা হচ্ছে। জাতিসংঘ পর্যন্ত নিন্দা জানিয়ে কৈফিয়ত চেয়েছে ।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরকারের বর্বরতা বিশদভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট নয়, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং সরকারের ফ্যসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র সরকার,যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিষ্ঠরভাবে দমন করতে গিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে নিরপরাধ ,মানুষ,,ছাত্র, যুবক, নিষ্পাপ শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। গত ১৭ বছরে সরকারের অগণতান্ত্রিক ,গণবিরোধী কার্যকলাপ, ভোটাধিকারসহ জনগণের সকল অধিকার হরণ , নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস, দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে বিদেশে এই সরকার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা নতুন নয়। বরং দেশের জনগণ আন্দোলন সংগ্রাম করে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
দেশে এবং বিশ্বব্যাপী গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ ,ঘৃণার সৃস্টি হয়েছে, তা প্রশমিত করার ব্যর্থ চেষ্টায় নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার নামে জোর করে ধরে এনে মায়াকান্নার নামে ফটোসেশন করছে অবৈধ সরকার প্রধান। হত্যাকারীদের খোঁজার কথা বলে প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করতে প্রতারণা করা হচ্ছে শহীদ পরিবারের সাথে। এখন কারফিউ জারী রেখে,সেনা মোতায়েন করে,কঠোর প্রেস সেন্সারশীপ দিয়ে, সামাজিক গণমাধ্যম বন্ধ রেখে, শক্তি প্রয়োগ করে, গুম,গ্রেফতার অব্যাহত রেখে ,রাজনীতি ও গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরে হতাযজ্ঞের সাফাই গাইছেন এবং উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপানোর ষড়যন্ত্র করছেন। চলমান আন্দোলনের রচয়িতা এদেশের সাধারণ ছাত্র সমাজ। আন্দোলন এবং হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিথাচার করে ছাত্র-জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ছাত্র-জনতা নিজেদের চোখে দেখেছেন অবৈধ সরকারের নির্দেশে তাদের পেটোয়া বাহিনী আকাশ ও ভূমি থেকে নজিরবিহীনভাবে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে। অথচ রংপুরের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে সরাসরি পুলিশের গুলিতে হত্যা করা হলেও ওই ঘটনায় উল্টো আন্দোলনকারীদের ইট পাটকেলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের এজাহার দায়ের প্রমাণ করে সরকার প্রকৃত হত্যাকারীদের বাঁচাতে ব্যস্ত। অন্যান্য হত্যার ঘটনার মামলা একই রকমের হবে, এটা দেশবাসীর অজানা নয়।
বিনা ভোটের জবরদখল করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকার ছাত্র আন্দোলনের ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিত্যদিন পাগলের প্রলাপ বকছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা ,বানোয়াট ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েই চলেছে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রী, দলকানা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা । তারা মনে করছে বাংলাদেশের তথা সারা বিশ্বের মানুষ বোকার স্বর্গে বাস করছে তারা যা বলবে তাই বিশ্বাস করছে। আন্দোলন দমন করতে ইন্টারনেট সরকারের নির্দেশে বন্ধ করলেও ডাটা সেন্টারে অগুন দেওয়ার মিথ্যা কথা প্রচার করা হয়েছে। জনগণকে বোকা বানানোর এ ধরনের বিরামবিহীন সরকারী প্রচেষ্টা পণ্ডশ্রমে পরিণত হতে বাধ্য।
সরকার যতই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, মিথ্যাচার করছে ততই প্রতিদিন সত্য প্রকাশ অব্যাহত রয়েছ । আজকে দেশের বিবেকবান সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে রাজপথে নেমে আসছে। দেশের সকল মানুষের ঐক্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। জনবিচ্ছিন্ন সরকার সাময়িক রাষ্ট্রের সকল শক্তি অপ ব্যবহার করে দামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে, যা কোনো ভাবেই এই অবৈধ সরকারকে রক্ষা করতে পারবেনা । ১৭ বছর ধরে দেশের ১৮ কোটি মানুষের উপরে যেভাবে নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম করেছে, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট করে জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে, এদেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ তার কড়ায় গন্ডার হিসাব নিতে আজকে সোচ্চার। এই সরকার রাষ্ট্রঘাতি, প্রাণঘাতি, গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এই অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী,ফ্যসিস্ট সরকারের পদত্যাগই সকল সমস্যার সমাধান । তাই, সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, আর কোনো প্রাণ কেড়ে না নিয়ে , আন্দোলন দমনে ব্যর্থ চেষ্টা না করে , হত্যা, ধ্বংস, নৈরাজ্যের দায় দায়িত্ব অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর না চাপিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।
আমি অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজনীতিকে উন্মুক্ত করা, নিষ্টুর দমন-নিপীড়ন বন্ধ , গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি ,মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি করছি । রাজনৈতিক সংকট সমাধানে রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।