ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডেকে কাউকে কথা বলার সুযোগ না দেওয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে হট্টগোল করেছেন সাবেক নেতারা।
তারা বলছেন, দলের দুর্দিনে সব সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এগিয়ে আসে। মত বিনিময় করার কথা বলে তাদের ডেকে এনে নিজেই বক্তব্য দিয়ে চলে যাওয়াটা ‘স্বেচ্ছাচারিতা’।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বুধবার বেলা ১১টায়।
নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর সভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যিনি সত্তরের দশকের শেষে দুই মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সভায় উপস্থিত একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের যেটা করেছেন, সেটা নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে ঢাকা যৌথ সভাগুলোতে সাধারণত কাউকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একাই কথা বলেন।
কিন্তু বুধবার মত বিনিময়ের আমন্ত্রণ পেয়ে আসা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা সামনে থেকে হট্টগোল শুরু করেন। একজন বলে ওঠেন, “ডেকে এনে আপনি একাই কথা বলা শুরু করলেন, আমাদেরওতো বহু কথা আছে।”
তখন অনেকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে অনুষ্ঠান শেষ না করেই সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা সাংবাদিকদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাংবাদিকরা কেন এখানে— এমন প্রশ্নের মুখে অনুষ্ঠান বয়কট করে চলে যান সাংবাদিকরা।
অনেক সাবেক ছাত্রনেতা মত বিনিময় সভার মাঝেই বের হয়ে চলে যান, যাওয়ার সময় কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছেন, আগে তো আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের কথা বলার সুযোগ দেবেন। কিন্তু তা না করে মতবিনিময় সভার জন্য ডেকে মিডিয়ার সামনে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। এটা ঠিক না, এটা স্বেচ্ছাচারিতা”
এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মতবিনিময় সভায় এলে অনেকেই হইহুল্লোড় করে ওঠেন। সাবেক ছাত্রনেতাদের একজন চিৎকার করে বলতে থাকেন, “উনি এখানে কেন? উনার ছেলে তো সরকারের বিরুদ্ধে পোস্ট (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) দেয়।”
সাবেক নেতাদের হট্টগোলের মধ্যে মত বিনিময় শেষ না করে ওবায়দুল কাদের দলীয় কার্যালয়ে তার অফিসে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ত্যাগ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “এটা কেমন কথা ভাই! আমাদের ডেকে আনা হয়েছে মত বিনিময় করবেন, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কথা না বলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। আমাদেরও তো কথা আছে।
“আমরা তো উনার সংবাদ সম্মেলন দেখতে আসি নাই, আমাদের ডাকা হয়েছে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন এই জন্য।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে বুলবুল বলেন, “ছাত্রলীগ নেতাদেরকে সব সময় মাঠে খাটানো হয়, সক ধরনের রিস্ক নেয় ছাত্রনেতারা, আর তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে, একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মেয়ে ছাত্রলীগ করে না।
“তাদের সন্তানদেরও দেশে থেকে ছাত্রলীগ করতে হবে। আমরা খেটে যাব আর তারা গাড়ি বাড়ি করে সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা করাবে, এটা কেমন কথা? এসব কারণে আমাদের দলের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।”