‘নিরাপত্তার জন্য মানুষ কেন ডিবি কার্যালয়ে যাবে, থানায় কেন না’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীর মুক্তি ও গুলি ছোড়া বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি হয়নি আজ। শুনানি না হলেও আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন প্রীতম।

তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে বেঞ্চ অফিসাররা জানিয়েছে, বিচারপতিদের মধ্যে একজন অসুস্থ হওয়ায় তিনি আসছেন না। ফলে শুনানিটা আজকে হচ্ছে না। এটা আগামীকালও হতে পারে। আমরা দেখব, আগামীকাল এই বেঞ্চের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে কি না। যদি থাকে তাহলে কালকে শুনানি হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা যে, আমরা জানছি আমাদের দেশের ছয়জন নাগরিক, তারা প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাদেরকে দেখা করতে দেওয়া হলো না। যদি তারা সেখানে স্বেচ্ছায় থাকতেন; যে তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন। তাহলে তো তারা দেখা করতে দিতেন। কারণ এরা তো তাদেরই শিক্ষক—সেটা তো হলো না।’

তিনি বলেন, ‘এই ছাত্ররা যদি সেখানে স্বেচ্ছায় থাকেন, তাহলে কেন তাদের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না? কেন ভিডিও আলাদা করে ছাড়া হচ্ছে? এ বিষয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই আমার মনে হয়, তারা ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে কালকে তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল যে কথাটা বলেছেন যে, তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় সেখানে আছেন।’

‘আমাদের পরিষ্কার প্রশ্ন, আদালতের এখতিয়ার রয়েছে তাদের কাছ থেকে শোনার যে, তারা স্বেচ্ছায় আছেন কি না? আদালত যদি শুনতে নাও পারেন, সরকারের কাছে নিশ্চিয়ই এই খবরটা গেছে এখন পর্যন্ত, তারা গণমাধ্যমের সামনে এদের কথা বলতে দিন। গণমাধ্যমে এসে তারা বলুন যে, তারা স্বেচ্ছায় আছেন। গণমাধ্যম দেখুক যে, তাদের সামনে কোনো অস্ত্র নেই, তারা কোনো চাপে নেই। তারা যদি স্বেচ্ছায় থাকেন, আমি জানি না; আরও যারা আমরা ক্ষেত্রে বিশেষে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি, আমাদেরও এই সুযোগ আছে কি না—আমাদের সবাই গিয়ে ডিবি হেফাজতে নিরাপদ বোধ করব,’ যোগ করেন তিনি।

প্রীতম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আইন আছে কি না? যদি না থাকে, তাহলে কী বিচারে ডিবি কার্যালয়ে; গোয়েন্দা বিভাগ, যাদের কাজ মামলার তদন্ত করা, সেখানে একজন মানুষ নিরাপত্তার জন্য যাবেন। কেন নিকটস্থ থানায় নয়? সেই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবে সামনে আসে।’

সংযুক্ত আরব-আমিরাতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি নাগরিকদের মুক্তির উদ্যোগ চেয়ে আরেকটা পিটিশন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের ভাইরা কীভাবে নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে যান। সংযুক্ত আরব-আমিরাতে তারা জানতেন, আইন আছে, প্রতিবাদ করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। তারপরও তারা মাঠে নেমেছেন, তারা কারা বরণ করেছেন। তাদের এই সাহসের প্রতি আমারে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার কথা যেমন জানাতে চাই, একইসঙ্গে তাদের মুক্তির ব্যাপারে, তাদের ভালো থাকার ব্যাপারে সরকারের চূড়ান্ত নিরবতা, সেটার ব্যাপারেও নিন্দা জানাই। আমাদের কয়েকজনের চিন্তা আছে, আমরা আরেকটি পিটিশন দায়ের করব যাতে সরকার তাদের মুক্তির জন্য আশু পদক্ষেপ নেয়।’

ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের অবিলম্বে মুক্তি এবং আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আয়নুন্নাহার সিদ্দিকা ও মঞ্জুর-আল মতিন গতকাল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ এই রিটের শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুন...