বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা বিস্তারিত খবর প্রকাশ করেছে। আমেরিকার এবিসি নিউজ শিরোনাম করেছে-‘বাংলাদেশে সহিংসতা অব্যাহত, ৮ জন নিহত, শতাধিক আহত। ‘এতে বলা হয়েছে , বাংলাদেশে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সহিংসতা। রোববার পুলিশ এবং শাসক দলের কর্মীদের সাথে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে । বিক্ষোভকারীরা “অসহযোগিতার ” ডাক দিয়েছে। জনগণকে ট্যাক্স এবং ইউটিলিটি বিল না দেওয়ার এবং রোববার, বাংলাদেশে একটি কর্মদিবসে কাজে যোগ না দেবার আহ্বান জানিয়েছে। অফিস, ব্যাংক এবং কারখানা খোলা থাকলেও ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের যাত্রীরা কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
কাতারভিত্তিক আল–জাজিরা শুরু থেকেই কোটা আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত-সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করে আসছে। আলজাজিরা শিরোনাম করেছে – ‘বাংলাদেশে ছাত্ররা নতুন করে বিক্ষোভে সামিল , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের আহ্বান’। এতে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি কুমিল্লা ও গাজীপুরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ঢাকা থেকে রিপোর্ট করার সময় আল জাজিরার রিপোর্টার তানভীর চৌধুরী বলেছেন যে ‘ছাত্র আন্দোলন একটি জনআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ‘ সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে সর্বস্তরের মানুষ ।
বিবিসি শিরোনাম করেছে- ‘বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। ‘সেখানে বলা হয়েছে , ছাত্রনেতারা সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে । বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।
সারাদেশে আহত হয়েছেন ডজন খানেক। রাজধানী ঢাকায়, মোবাইল ডিভাইসে ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস স্থগিত করা হয়েছে ।বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে ঢাকা শহর এলাকায় ফোর জি ইন্টারনেট পরিষেবা আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে, তবে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু থাকবে।
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, – ‘সরকারের পদত্যাগের দাবির মধ্যে বাংলাদেশে আবারও বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়েছে। ‘ এতে বলা হয়েছে -গত মাসে বিক্ষোভের সময় নিহত ২০০ জনেরও বেশি ছাত্র এবং অন্যদের বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশের রাজধানীতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে কারণ প্রতিবাদের ঢেউয়ে গা ভাসিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সরকারের সমর্থক কয়েকটি দলও শহরে সমাবেশ করেছে।
চীন ভিত্তিক সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – ‘হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভ, সেনাবাহিনী ‘জনগণের পাশে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার বাংলাদেশি বিক্ষোভকারী রোববার সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, সেখানে দেশব্যাপী গণ-সমাবেশ ও সহিংসতা শুরু হওয়ায় অনেকে নিহত ও আহত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের লাঠি হাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শাহবাগ স্কোয়ারের সমাবেশে দেখা গেছে।
ভারতের ইকোনোমিক টাইমসের শিরোনাম করা হয়েছে – ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশে নতুন করে উত্তেজনা বেড়েছে। ‘
এনডিটিভির শিরোনাম করা হয়েছে – ‘বাংলাদেশের সংঘর্ষে ২১ জন নিহত, কেন্দ্র ভারতীয়দের “সতর্ক ” থাকতে বলেছে’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নতুন সংঘর্ষে ২১ জন নিহত হওয়ার পর ভারত বাংলাদেশে বসবাসকারী তার নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে। আজও ভয়াবহ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ডজনখানেক।
দা হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে রবিবার কমপক্ষে ১৮জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে -‘ বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষে ১৩ জেলায় নিহত ৩২ জন, সোম থেকে তিন দিন ছুটি ঘোষণা সরকারের।’সেখানে লেখা হয়েছে, আবারও পথে বাংলাদেশের পড়ুয়া, যুবসমাজ। তাঁদের এ বার দাবি একটাই, শেখ হাসিনা সরকারের অপসারণ। রবিবার থেকে সে দেশে শুরু হল অসহযোগ আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদল আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন আন্দোলনকারীরা। বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। সোমবার থেকে তিন দিন ছুটি বাংলাদেশে।