আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগীরা ১৫ আগস্টে ‘পাল্টা অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা করতে পারেন, এমন খবর পেয়েছেন দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বলেছেন, কেউ এ ধরনের কোনো চেষ্টা করলে জনতার স্রোতে তাঁদের পিষে ফেলা হবে। আগামীকাল সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সম্প্রীতি সমাবেশে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক এই আহ্বান জানান। ‘একতার বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা ভারতে বসে পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে! পাল্টা গণ–অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হলে আপনাদের জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করলে কোটি মানুষের সমাগমে পিষে ফেলব। এই বাংলাদেশ ১৬ বছর পর স্বাধীনতার নতুন মুখ দেখেছে। সেই মুখের দিকে কেউ নজর দেওয়ার চেষ্টা করলে তার জায়গা এই দেশে হবে না।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান সারজিস। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সব দল, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত আন্দোলন ছিল। সামনে বিন্দুমাত্র বাধা এলে জনতার স্রোতে পিষে দিতে হবে। আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে।’
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘১৬ বছর ধরে যারা অত্যাচার-জুলুম করে আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, তারা বাংলার মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে প্রতিরোধ করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টদের দোসররা ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তারা রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।’
সরকারের পতনের প্রাথমিক বিজয়কে স্থায়ী করতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘এই দেশে সবার প্রাথমিক পরিচয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। এই দেশে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না।’
আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনি হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। একটি সফল গণবিপ্লবের পর দেশের সংখ্যালঘু ভাইদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না। আগামীকাল কেউ ষড়যন্ত্র করতে এলে তাদের প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’
এত দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিগুলোয় ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও আজকের সমাবেশে সংগঠনগুলো অংশ নেয়নি। তবে সমাবেশে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় (সাহস) বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে শেখ হাসিনার দোসরেরা। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, সবাই বাংলাদেশি। ষড়ন্ত্রের অপচেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলে তা রুখে দেব।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহও সমাবেশে বক্তব্য দেন৷ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। মুসলমান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশে একটি সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না। আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জীবন দিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করব।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য থেকে কেউ আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা প্রস্তুত থাকব।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রভাষক মাহাদী হাসান, সাবেক ছাত্র আলী আহসান জুনায়েদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শাহবাগ থেকে গণপদযাত্রা বের করা হয়। পদযাত্রাটি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া-প্রার্থনা করা হয়।