নরসিংদীতে ২ গ্রুপের টেঁটাযুদ্ধে নারীসহ নিহত ৫, আহত ৩০

নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ ও গুলিতে নারীসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ৩০ আহত হয়েছে। আহতরা উপজেলা ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রাতে ও বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ ও বালুচর এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকার ইসমাঈল হোসেন ব্যাপারীর দুই ছেলে আমির হোসেন (৭০) ও বাদল মিয়া (৪৫), আব্বাস আলীর ছেলে আনিছ মিয়া (২৫), শাহীন মিয়ার ছেলে মোস্তাকিম জুনায়েদ (১৬) ও একই ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি এলাকার শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৩৫)। নিহতরা সবাই আ. লীগ নেতা ফিরোজ মিয়ার অনুসারী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুটি পক্ষের মধ্যে একটির নেতৃত্বে আছেন রায়পুরা উপজেলা বিএনপি সদস্য আবু হানিফ জাকারিয়া (হানিফ মাস্টার) ও অন্যটির নেতৃত্বে আছেন শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মেম্বার। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাঁচ বছর ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুটি পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরী হয়। বুধবার রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্র টেঁটা, দা, বল্লম, ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়। গভীর রাতে পুলিশ সেখানে যেতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আবারও সংঘর্ষে জড়ান দুটি পক্ষ। ওই সময় টেঁটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ পাঁচজন নিহত হয়। নিহত সবাই আ. লীগ নেতা ফিরোজ মিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হন উভয় পক্ষের ৩০ জন। আহতদের মধ্যে তোফাজ্জল মিয়া নামে এক স্কুল শিক্ষককে আশঙ্কাজন অবস্থায় ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাঁর বুকে ও কোমড়ে দুটি টেঁটার আঘাত রয়েছে।

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) রঞ্জন বর্মন বলেন, হাসপাতালে ১৯ আহত জন রোগীকে আনা হয়। এর মধ্যে তিন জনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাদের শরীরে টেঁটা ও গুলির আঘাত ছিল। গুরুতর আহত একজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে শুনেছি তার মৃত্যু হয়ছে।

হামলা চালিয়ে দুই ভাই আমির হোসেন ও বাদল মিয়াকে গুলি করে প্রতিপক্ষের লোকেরা হত্যা করেছে বলে জানান বোন আনোয়ারা বেগম। বড় ভাই আমিরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। অপর ভাই বাদলকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে দুটি পক্ষের দলনেতা বিএনপি নেতা আবু হানিফ জাকারিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ মিয়াকে মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও ধরেননি তারা। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা আছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

তিনি আরও জানান, ৫ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন এবং ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্ঘে প্রেরন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন...