সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ এবং নির্বাসনে পাঠানোর মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েছেন বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা। এখন তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করছেন।
বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারকারী দুটি দল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি। এই দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বিবেচনা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা।
মৌলিকভাবে গণতন্ত্র হলো রাজনৈতিক পছন্দ বেছে নেয়ার সুযোগ। সুতরাং বাংলাদেশি জনগণের যেকোনো সুযোগকে, যেমন ছাত্রদের পরিচালিত পার্টিকে স্বাগত জানানো উচিত।
কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা দেশে একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রচারণায় বিকশিত হতে চান, তাহলে উদ্দেশ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে তাদেরকে পরিবর্তনে সফলতা আনতে হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন যা, তাদের তাৎক্ষণিক দাবির পাশাপাশি তাদের পলিসিগত লক্ষ্য পরিস্কারভাবে ফুটিয়ে তোলে, যেন তারা ভোটারদের সমর্থন চাইতে পারেন। এখন পর্যন্ত ভবিষ্যতের এসব রূপরেখা, যা তারা জাতির জন্য পরিকল্পনা করে- তা তুলে ধরেননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে অতীত যদি পথপ্রদর্শক হয়, তাহলে এই কাজ বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের এ অঞ্চল এবং বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ভারতে বিরোধীদের সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলনে ১৯৭৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পতন হয়েছিল।
লালু প্রসাদ যাদব, নীতিশ কুমারসহ ওই আন্দোলনের অনেক ছাত্রনেতা তারপর থেকে দীর্ঘ ও সফল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েছেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কথিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। এর ফলে ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তি হয়। তারাই অসম গণপরিষদের ভিত্তি রচনা করে। এই দলটি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি শাসন করেছে। এরপর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসে।
অতি সম্প্রতি চিলিতে ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রজন্ম সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক। চিলিতে রোবিকের সরকার সমর্থিত একটি প্রগতিশীল নতুন সংবিধানের প্রচারণা পরাজিত হয় অথবা আসামে অসম গণপরিষদ তাদের মূল সংশ্লিষ্টতা থেকে হারিয়ে যায়।
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিবিদদেরকে নির্বাচনী গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জে পাস করতে হবে। ভোটাররা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এটাও তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।