আওয়ামী লীগ ছাড়াও অনেক রাজনৈতিক দলের আঁতাতের ইতিহাস রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আমরা অনেককেই দেখেছি অনেক সময় আঁতাত করতে। আমরা সেই আঁতাতকারী দল নই। ১৬ বছর আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলেও সেই দেওয়ালকে আমরা পেছনে ফেলে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দল। সুতরাং এই সামগ্রিক একটি বিজয়ের মাঝে আপনারা যে বিভেদ বিভাজনের চেষ্টা করছেন এটা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ভাসানী মিলনায়তনে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রিকশাচালকসহ নিহত শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সাধারণ রিকশা ও ভ্যানচালকরা।
রিজভী বলেন, আজ যারা ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ গণতন্ত্রের বিজয়কে খণ্ডিত করার চেষ্টা করছেন নানাভাবে বিভাজনের চেষ্টা করছেন তাদের বলে রাখি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষকের দল। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের দল বীরত্ব সাহসের প্রতীকের দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া দেশনায়ক তারেক রহমানের দল। এই দল প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয়ের নেতৃত্বদানকারী দল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের আত্মদানে আমরা এ বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের কোনোভাবেই তাদের অবদানকে খাটো করা যাবে না।
রিজভী বলেন, এমন একটি শাসক এতদিন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রেখেছিল যে কোনো ভদ্রতা জানে না, যারা কোনো শিষ্টাচার জানে না। যে ফ্যাসিবাদ সরকার নিজের মতো করে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়েছে, কাটছাঁট করে সংবিধান বানিয়েছে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কবজার মধ্যে নিয়ে। কিন্তু গণশত্রুরা কখনো টিকতে পারে না। জনগণ যখন ধেয়ে আসে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখন নির্দ্বিধায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এমনও শুনেছি তিনি যখন পালাচ্ছিলেন তখনও নাকি নির্দেশ দিচ্ছিলেন তোমরা গুলি চালিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করো।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্রের স্বপক্ষে আরও অনেকেই লড়াই করেছেন কিন্তু আমি বলবো যে বিএনপি ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ আন্দোলন করে গেছে। আজ সবার আন্দোলনের অবদানে এই অন্তর্বর্তী সরকার। যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতটুকু সংস্কার করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে রাজনীতির যে ধারা সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটাই তো মূল লক্ষ্য এজন্যই তো লড়াই।
তিনি বলেন, যারা এই ধরনের বিভাজনমূলক কথা বলছেন তারা সঠিক বলছেন না। বিএনপি একটি বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাস করে বলেই স্বৈরাচার এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না যে কথা বলেছিল সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন খালেদা জিয়া। উনি তখন বলেছিলেন এই আওয়ামী সরকার এবং আওয়ামী লীগ এরা বিষাক্ত সাপের চেয়ে ভয়ঙ্কর তার প্রমাণ কি আপনারা পাননি? যারা দুধের বাচ্চাকে গুলি করে তাদের রক্ত পান করে তারা বিষাক্ত সাপের চাইতেও ভয়ংকর। সেটাই তো প্রমাণিত হয়েছে।
রিজভী বলেন, হাসিনা যখন বলেছিলেন এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেইমান। শেখ হাসিনার চরিত্রই তাই তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবার সেই এরশাদের অধীনে নির্বাচনে চলে গেলেন। তখন তার সঙ্গে কিন্তু আরো কিছু রাজনৈতিক দল গিয়েছিল আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। শুধু শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ একাই যায়নি আরো অনেক দল গিয়েছিল কিন্তু বেগম জিয়া যাননি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন থাকা আজ সেটা কি প্রমাণিত হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে অন্তত বিএনপি অংশগ্রহণ করলে একটা ফ্রেস সেভিং হতো। সুতরাং তারেক রহমানের সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে ৫ আগস্ট গণতন্ত্রের বিজয়।
মিডিয়া মালিকদের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা তার নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের টেলিভিশন দিয়েছেন। অধিকাংশ টেলিভিশনের মালিক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের লোক।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু ,প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।