গণতন্ত্রকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে: তারেক রহমান

গণতন্ত্রকে এখন নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বিএনপি’র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেন, আইনের শাসন, মত প্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেড় যুগব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশকে নিপীড়ন-নির্যাতনসহ সকল পৈশাচিকতা মুক্ত একটি সুস্থির-শান্তিময় নাগরিক অধিকার সুরক্ষার দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। দেশজুড়ে যেন আর কখনোই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো ঘৃণ্য বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি না হয়।

তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপি’র মূল লক্ষ্য। এবারে দেশের পূর্বাঞ্চলে প্রলয়ংকারী বন্যার কারণে বিএনপি’র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে একদিন করা হয়েছে। বিএনপি জনগণের দল, এই মুহূর্তে দেশের একটি বড় অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দি মানুষ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করাই সবচেয়ে বড় কাজ। আমি তাই আবারো দলের সকল নেতাকর্মীকে বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১লা সেপ্টেম্বর দিনটি বাংলাদেশি মানুষের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। ১৯৭৮ সালের এইদিনে এক শুভক্ষণে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশালী ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল শুধুমাত্র একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য। সেই মৃত গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করেন জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের আবারো পথচলা শুরু হয়। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বিগত ৪৬ বছরে কয়েকবার সকলের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠুু নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে কাজ করে গেছে। আমি সফল রাষ্ট্রনায়ক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের এই প্রিয় দল অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র আদায়ে নির্দ্বিধায় অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছে অসংখ্য নেতাকর্মী। ৮০’র দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি’র রাজপথে আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তার সেই অগ্রণী ভূমিকার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্রের অনন্য প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিএনপি’র বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণ কর্তৃক সবসময় সমাদৃত হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র সমুন্নত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিএনপি’র উদ্যোম ও উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দলটি দেশবাসীর কাছে এখন সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন্ন রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত দলের যে সমস্ত নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন ও দেড় দশকের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস এবং সম্প্রতি ছাত্র-জনতার রক্তঝরা আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলের বন্যায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৪৬ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের অরাজকতার অব্যাহত ধারায় ৭৫’র পটপরিবর্তনের পর ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলে ১৯৭৮ সালে ১লা সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। শহীদ জিয়ার গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ছিল সুগভীর। আমি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

তিনি বলেন, বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সংকটকালে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে জুলুম-নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মীরা আত্মদান করেছেন এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যায় যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রতিও জানাই আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। বিএনপি’র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আরও পড়ুন...