সিরিয়ায় স্বাধীনভাবে বাঁচতেই শুধু ‘নারীদের গ্রাম’

পিবিএ, ডেস্ক– উত্তর পূর্ব সিরিয়ার কামিসলি থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে প্রধানত কুর্দিশ সম্প্রদায়ের মানুষজনদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি কমিউনিটি। এখন যা শুধুমাত্র ‘নারীমহল’ হিসেবেই পরিচিত। পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো মুক্ত এই গ্রাম। গ্রামের স্থানীয় নারী ও আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় তৈরি হয়েছে গ্রামটি। এখানকার বাড়ি, ছবি, শিল্পকার্য, গৃহসজ্জা সবকাজ নারীরাই করেছেন। কিছু বছর আগেও তাদের এই গ্রাম ছিল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অধীনে। যেখানে হাজার হাজার ইয়াদিদদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হয়েছিলেন অনেকেই। সেই কুর্দিশ নারীরাই অস্ত্র তুলে নিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।

যুদ্ধ আর যুদ্ধ বিরতি সংগ্রামে তারা অভ্যস্ত। সকালে পাখির ডাকের বদলে তাদের ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আর লিঙ্গভেদ বুঝিয়ে দেয় তোমরা মেয়ে। এই সমাজে ক্রীতদাসীর ভূমিকা পালনই তোমার একমাত্র কাজ।

সিরিয়ায় ক্রীতদাসী খ্যাতি পাওয়া নারী বলছেন,’ আমাদের জীবনে পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমাদের জীবন সুন্দর। নিজেদের মতো স্বাধীনভাবে স্বচ্ছন্দ জীবন কাটাতে আমরা সক্ষম। সিরিয়ার বিচ্ছিন্ন গ্রাম জিনওয়ার। গ্রামে প্রবেশ করলে রাইফেল ছাড়া আর কোনও শব্দই শোনা যায় না। এই গ্রামের একদল নারী যখন ঠিক করেন,’ যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’- এই ট্যাগ লাইনেই তাদের অঞ্চলের শান্তি রক্ষা করবেন তখন বিশ্বজুড়ে হইচই পড়েছিল। কিন্তু দুবছরের প্রচেষ্টায় তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছেন। তাই এখন সগর্বে বলতে পারেন, ‘বেঁচে থাকতে আমাদের জীবনে পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়েছে’।

জিনওয়ার গ্রামের বাসিন্দা জায়নাব গাভারি (২৮) জানান, আমাদের গ্রাম শুধুমাত্র সেইসব মেয়েদের জন্য যারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চায়। একসময় দাসত্ব এবং এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। খুব ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই পরিবার ছিল না। খুব কম বয়সেই অনেকে যুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছেন। কিন্তু এখন তারা নিজেদের ও সন্তানদের প্রতিপালনে সক্ষম। নিজের চাষ করেন, জমির যত্ন নেন এবং সেই ফসল বাজারে বিক্রি করে রোজগার করছেন। সেই উপার্জনের টাকায় চলছে সংসার। এছাড়াও পুরো গ্রামের সমাজ এবং অর্থনীতি সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য নিজেরাই ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে নেই কোনও সাম্প্রদায়িক বিভাজন।

বেশ জোর দিয়ে জিনওয়ারের বাসিন্দা নাসরিন কাদির (১৭) বলেন, এই গ্রাম শুধুমাত্র বিধবা, ডিভোর্সি বা পুরুষের সঙ্গে থাকতে না চাওয়া মেয়েদের জন্যই নয়। এই গ্রাম মেয়েদের মুক্তভাবে বাঁচার জন্য। ‘পরিবার পরিজনহীন একা বাঁচতে চাওয়ার এই লড়াইটা একসময় কঠিন মনে হয়। কিন্তু এটা আমার কাছে একরকম জেদ। আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...