আমিরাতে ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন নিদর্শনের মাটির মসজিদ

মোঃ তোফায়েল আহমেদ,আরব আমিরাত: উন্নত ও সুশৃংখল দেশ হিসেবেই পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরব বিশ্বের দেশ হওয়ার কারণে দেশটির রয়েছে ইসলামিক ঐতিহ্য। যে অঞ্চলগুলোতে প্রথম দিকে ইসলামের বিস্তার লাভ করেছে তার মধ্যে এই দেশটি অন্যতম। এখানকার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন আল বিদিয়া এ মসজিদটি আরব আমিরাতের প্রাচীনতম মসজিদ ও ঐতিহাসিক প্রত্মতাত্বিক নিদর্শন যা দেশটির উজ্জ্বল অতীতের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাড়িয়ে আছে।

আমিরাতে ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন নিদর্শনের অন্যতম একটি হচ্ছে ফুজাইরার আল বিদিয়া মাটির মসজিদ। ফুজাইরা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে আল বিদিয়া নামক স্থানে ৫৩ বর্গমিটার (৫৭০ বর্গফুট) আয়তন জুড়ে মসজিদটি অবস্থিত। এটি অটোমান(ওসমানীয়) মসজিদ নামেও পরিচিত।

সম্পূর্ণ কাঁচামাটি ও পাথরের তৈরি আল বিদিয়া মসজিদ। চারপাশের দেয়াল ছাড়া একটি মাত্র মাটির পিলারের উপর ভর করে আছে ৫ শ’ বছরেরও অধিক পুরনো এই প্রাচীন মসজিদ। কাঁচা মাটি দিয়ে পলেস্তারা করা হয়েছে দেয়ালে। বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হলেও বর্তমানে দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে কয়েকবার দেয়ালের রঙও পরিবর্তন করা হয়েছে। মূল মসজিদে কোনো জানালা নেই। তবে বাতাস যাতায়াতের জন্য মূল ফটকের কিছুটা অংশ প্রায় সময় খোলা থাকে।

২০০৩ সালের মার্চে দুবাই মিউনিসিপ্যালিটি নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করেছে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা অজুখানা, বিশ্রাম কক্ষ, পাহাড়ের উপরে দুর্গে যাতায়াতের জন্য পাথরের সিঁড়ি, সীমানা প্রাচীরসহ মসজিদের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি বাগান। এ ছাড়া এখানে দুটি দোকানও রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দিবসে আমিরাতের ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ফুজাইরা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ১৯৯৭-৯৮ সালে মসজিদটির নির্মাণকাল নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানের রিপোর্টে, মসজিদটি ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে লোক মুখে শোনা যায়, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) সময় ইসলাম প্রচারের জন্য আগত কিছু সাহাবা পাহাড় কেটে এই মসজিদটি তৈরি করেন। প্রায় ৫৭৩ বছর বয়সী আল বিদিয়া মসজিদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী। এর আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলী সবাইকে অবাক করবে। যাতে অত্যন্ত দক্ষ ডিজাইনারের ছোঁয়া লক্ষ করা যায়। মসজিদটি যেখানে অবস্থিত সেই জায়গাটিও এক অনন্য পরিবেশ- একদিকে পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত, অপরপাশে সাগর। বড় ও ছোট আকারের পাথর এবং কাদা মাটি দ্বারা মূলত মসজিদটি নির্মিত হয়।

মসজিদের ছাদে ভিন্ন রকমের চারটি গোল গম্বুজ, ছোট মেহরাব ও একটি মিম্বার ভেতরের দেয়ালের কারুকাজ- সব কিছুতেই রয়েছে দারুণ নির্মাণশৈলী। কোরআন রাখার জন্য দেয়ালের চারপাশে বক্স করা আছে। মসজিদের ভেতরে কিছু কোরান শরিফ, কয়েকটি বাতি, দুটি এসি, মাইক, একটি দেয়ালঘড়ি ও একটি বিদ্যুৎচালিত পাখা রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একটি অতি প্রাচীন বরই গাছ।

মসজিদের সামনে একটি পানির কূপ ও পেছনে দুটি দুর্গ আছে। দুর্গ দুটি মসজিদের পেছনের অংশে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। দুর্গ দুটি সম্পর্কেও মতপার্থক্য রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে। কারো মতে আজান দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো এই দুর্গ, আবার কারো মতে সাহাবারা যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার জন্য তৈরি করেছিলেন দুর্গ দুটি। দুর্গের চূড়ায় উঠলে একদিকে আরব উপসাগরের অংশ বিশেষ দেখা যায়।

অপরদিকে খেজুর বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে খুব সহজে। বর্তমানে ফুজিরাহসহ পুরো আমিরাতের অনত্যম দর্শনীয় স্থান এটি। প্রতিদিন আল বিদিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়।

আরও পড়ুন...