আরজি কর-কাণ্ডে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। ফলে বেশ বেকায়দায় রয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার। এমন পরিস্থিতে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নে দুই ঘণ্টার বেশি সময় বসে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এরপরও বৈঠক না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
মমতা বলেন, ‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যারা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রং বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।’
অনেকেই বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন কিন্তু বাইরে থেকে সমঝোতা না করার নির্দেশ এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বৈঠক করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল। দু’তিন জন রাজি হননি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। ডাক্তারদের অনুরোধ করছি, কাজে ফিরুন।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আমি যত দূর জানি, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাজ্য পদক্ষেপ করলে তারা বাধা দেবে না। কিন্তু আমি কিছু করব না। বহু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, সাত লক্ষ মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। আমার হৃদয় কাঁদছে। ওরা ছোট, আমি ওদের ক্ষমা করছি। বাংলার মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। তিনদিন চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারলাম না।’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এরপরেও যদি জুনিয়র ডাক্তারেরা বৈঠক করতে চান, তবে মুখ্যসচিব এবং নবান্নের অন্যান্য আধিকারিক যেন বৈঠক করেন এবং তাদের বক্তব্য শোনেন। তবে তিনি আপাতত আর আলোচনায় থাকছেন না।
এদিকে, মমতার মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আদালতকে প্রভাবিত করতেই নবান্নের সভাঘরের ছবি সরকার প্রকাশ করেছে। বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির কোনো সম্পর্ক নেই। শীর্ষ আদালতের শুনানিও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তার সঙ্গে আদালত অবমাননারও কোনো সম্পর্ক নেই। পুরোটাই মমতার নাটক। ওর মুখোশ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই ন্যায্য দাবি মানলেন না। অচলাবস্থা কাটুক, তা উনি চান না।’
প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দু’টি প্রধান শর্ত দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তারা চেয়েছিলেন, এই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হোক। ৩০ জন প্রতিনিধি নিয়ে নবান্নে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন তারা। তবে এই দুই শর্তেই আপত্তি জানায় রাজ্য।
গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এর আগে, পরপর দুইদিন তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তৃতীয়বারের জন্য বৈঠক ভেস্তে গেল।